আপনার জানার ও বিনোদনের ঠিকানা

যশোরে বেড়েই চলেছে আলুর দাম, নিয়ন্ত্রণে ৭ ব্যবসায়ী

জেমস আব্দুর রহিম রানা: উৎপাদন মৌসুম শেষ হতে না হতেই এবার আলুর বাজার চড়া হতে শুরু করেছে। যশোরের বাজারে যে আলুর কেজি ছিল ৩০ টাকা, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে তার দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। আলুর বাজার এভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে আলু ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যশোর অঞ্চলের অন্তত সাত ব্যবসায়ী সক্রিয় রয়েছে।

যশোরের বাজারে ইতিমধ্যে আলুর দাম কয়েক দফা বেড়েছে। যশোরে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দামই এখন ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে খুচরা পর্যায়ে ঈদের আগেই ৩০ টাকা দরের আলু কেজিপ্রতি দাম বেড়ে ৫০ টাকার আশপাশে চলে আসে। এখন বড় বাজারগুলোয় প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দোকান কম খোলায় পাড়ামহল্লা ও বাজারের বিক্রেতাদের কেউ কেউ খুচরায় ভালো মানের প্রতিকেজি আলু ৬০ টাকা পর্যন্ত রাখছেন।

যশোর বড় বাজার, রেল স্টেশন বাজার, নিউ মার্কেট বাজারসহ যশোরের খুচরা পর্যায়ের বাজারে গিয়ে পর্যাপ্ত আলুর সরবরাহ দেখতে পাওয়া যায়। প্রতি দোকানে মানভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

আজ রোববার সন্ধ্যায় যশোরের বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মান ভেদে প্রতি পাল্লা (৫কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ২১৫ থেকে ২৪০ টাকা। তাতে করে পাইকারিতেই প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ৪৩ থেকে ৪৮ টাকা, যা খুচরা পর্যায়ে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

অথচ দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রতি কেজি আলুর ‘যৌক্তিক মূল্য’ ঠিক করেছে ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা।

বড় বাজারের আলু ব্যবসায়ী সুভাষ সাহা বলেন, বাজারে আলুর সংকট আছে। আর দামও আগে থেকেই বাড়তির দিকে ছিল। সব মিলিয়ে ঈদের পরে পাইকারিতে দাম নতুন করে ৪ থেকে ৫ টাকার মতো বেড়েছে।

হাটচান্নির আলু ব্যবসায়ী অরুন কুমার সানা বলেন, ‘ঈদের পরে পাইকারি বাজার থেকে প্রতিকেজি আলু ৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। খুচরায় আমরাও সেই ৫ টাকাই বাড়িয়েছি। এবার ভরা মৌসুমেও আলুর দাম বেশি ছিল। আমরা যেমন দামে আড়ত থেকে কিনে আনি তেমন দামেই সামান্য লাভে খুচরা বিক্রি করি।’

স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, যশোর বড়বাজার আলুপট্টি থেকে কেজিপ্রতি ৪৩ থেকে ৪৮ টাকা করে কিনে এনেছি। তবে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। একই তথ্য জানান খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম, সালাম, মমিনসহ অনেকে।

বড় বাজারের যশোর এজেন্সির মালিক আব্দুল মান্নান বলেন, আলুর আড়তদারদের কোনো কারচুপি নেই। তবে কোল্ডস্টোরে যারা আলু সংরক্ষণ করেন আলুর দাম তারাই বাড়িয়ে থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই অঞ্চলে আলুর বাজার ঊর্ধ্বগতির মূলে রয়েছেন যশোরের ৭ আলু ব্যবসায়ী। তারা হলেন- যশোর কোল্ডস্টোরেজের মালিক সানোয়ার হাজী, আলু চাষি সমিতি ও ব্যবসায় সমিতির সভাপতি সঞ্জীবন ভদ্র, ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকার সুশান্ত, বড়বাজারের শিহাব (যিনি বড়বাজারে পুরি-শিঙাড়া বিক্রি করেন), যশোর ঝিকরগাছা গদখালী এলাকার আব্দুল হালিম (যিনি একজন ওষুধ ফার্মেসির দোকানদার), একই এলাকার আলম খান, জেলার চৌগাছা উপজেলার শিল্পপতি হাসানুজ্জামান রায়হান।

এ ছাড়া এই তালিকায় আরও আছেন জেলার মনিরামপুর উপজেলার ইউসুফ আলী, একই উপজেলার নাসির উদ্দিন, রবিউল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

এসব ব্যবসায়ী যশোর অঞ্চলের বারোটি কোল্ডস্টোরেজ আলুর মৌসুমের আগেই চুক্তিবদ্ধ করে রাখেন। ফলে সাধারণ কৃষক আলু কোল্ডস্টোরেজ করার সুযোগ পান না। এসব মজুদদার ব্যবসায়ী আলুর মৌসুমে কেজি প্রতি ১১ থেকে ১৪ টাকা দরে আলু ক্রয় করে কোল্ডস্টোরেজগুলোতে সংরক্ষণ করেন। এরপর নওগাঁ ও বগুড়ার একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় করে যশোর অঞ্চলের আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, যশোর কোল্ডস্টোরেজের মালিক সানোয়ার হাজীর যশোর সেনা কল্যাণ কোলেস্টোরেজে এখনও বিশ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। আর সঞ্জীবন ভদ্রের সেনা কল্যাণ, গদখালী, রাজাহাট, কালীগঞ্জের ফারইস্টসহ বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজে রয়েছে ১ লাখ বস্তার বেশি আলু, বড়বাজারের শিহাবের যশোর সেনা কল্যাণ কোল্ডস্টোরেজে আছে ৫৭০০ বস্তা। রাজারহাট ও ঝিকরগাছা মিলে আরও আছে ৫০০০ বস্তা আলু। ঝিকরগাছা গদখালী এলাকার আব্দুল হালিমের সেনা কল্যাণ ও গদখালী কোল্ডস্টোর মিলে রয়েছে ৩৫ হাজার বস্তা, একই এলাকার আলম খানের গদখালী কোল্ডস্টোরে রয়েছে পাঁচ হাজারসহ নাভারন ও যশোর মিলে ৩৫ হাজার বস্তা আলু রয়েছে, জেলার মনিরামপুর উপজেলার ইউসুফ আলীর সেনা কল্যাণ কোল্ডস্টোরে রয়েছে পাঁচ হাজার বস্তা ও জেলার চৌগাছা উপজেলার শিল্পপতি রায়হানের দুটি কোল্ডস্টোরেজে রয়েছে ৫০ হাজার বস্তা আলু। এ শিল্পপতির দুটি কোল্ডস্টোরে আলু সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা দুই লাখ বস্তার অধিক।

এসব ব্যবসায়ী প্রতিদিন দেশের সব থেকে বেশি আলু উৎপাদনের স্থান ঠাকুরগাঁও-এ বিভিন্ন স্টোরেজের মালিকদের মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে বাজারে আলুর দাম নির্ধারণ করে থাকেন।

যশোর টাওয়ার কোল্ডস্টোরের ম্যানেজার আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের কোল্ডস্টোরে এক লাখ ৫৮ হাজার বস্তা আলু ছিল। ইতোমধ্যে কিছু আলু বের হয়েছে। এখনও কোল্ডস্টোরটিতে ৯০ হাজার বস্তার মতো আলু রয়েছে। তার মধ্যে যশোর কোল্ডস্টোরেজের মালিক সানোয়ার হাজীরই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার বস্তা।

যশোর অঞ্চলে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলু চাষি সমিতি ও ব্যবসায় সমিতির সভাপতি সঞ্জীবন ভদ্র আলু নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এসব আলু আমাদের মনে হলেও আমরা প্রকৃতপক্ষে এসব আলুর এজেন্ট। বিভিন্ন লোকজন আমাদের মাধ্যমে কোল্ডস্টোরেজগুলোতে রেখে থাকেন। বিনিময়ে আমরা কোল্ডস্টোর ও আলুর মূল মালিকদের কাছ থেকে একটা কমিশন পেয়ে থাকি। তবে আলুর প্রকৃত মালিক কারা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগটি বিছিন্ন করে দেন।’

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বা হিমাগার সমিতি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিল, এবার বছরব্যাপী প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকার ওপরে কিনতে হবে।

মৌসুম শেষ হতে না হতেই বাজারে আলুর দাম কয়েক দফা বেড়েছে। টিসিবির তথ্যমতে, গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর কেজিপ্রতি দাম ছিল ২৪ থেকে ৩০ টাকা; অর্থাৎ এ বছর আলু প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

জানা গেছে, এবার কৃষকের কাছ থেকেই বেশি দামে আলু বাজারে এসেছে। হিমাগারে রাখা আলুর দামও বেশি পড়ছে। এ ছাড়া গত বছর আলুর যে সংকট হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি যে উৎপাদন দরকার ছিল, সেটা হয়নি। সব মিলিয়ে এবার আলুর দাম বেশি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরকার অবশ্য দেশের বাজারে আলুর সংকট নিরসনে এটি আমদানির অনুমতি দিয়ে রেখেছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশেও আলুর দাম বেশি থাকায় আমদানিকারকদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কিছু আমদানিকারক সামান্য পরিমাণে আলু নিয়ে আসছেন। ঈদের আগে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভারত থেকে আমদানি করা আলু রাজশাহীর কয়েকটি হিমাগারে মজুত করা হয়েছে। বস্তা পরিবর্তন করে ওই আলু দেশি আলুর সঙ্গে হিমাগারে রাখা হয়। ফলে বাজারে কোথাও আমদানিকৃত আলুর হদিস মিলছে না।

যশোর ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তামান্না তাসনিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটা কোল্ডস্টোরে ভিজিট করেছি। বড় মজুদদারদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

যশোর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে বাজার বিপণন কর্মকর্তা ও ভোক্তা অধিদপ্তর কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরই আলু মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

৯০ হাজার সেনার সবচেয়ে বড় মহড়া শুরু করতে যাচ্ছে ন্যাটো’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় মহড়া শুরু করতে যাচ্ছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। জোটটি ৯০ হাজার সেনার বিশাল মহড়ার কথা জানিয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে

‘উত্তরবঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাইপলাইন মেরামতকাজের জন্য আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে উত্তরবঙ্গের চার জেলায় প্রায় তিন দিনের (৬০ ঘণ্টা’) জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে

দুপুরের মধ্যেই ঝড়-বৃষ্টির আভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুপুরের মধ্যে সিলেটের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা পর্যন্ত

‘সংসদ সদস্য বনাম ডিসি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: চারদিন ব্যাপি ডিসি সম্মেলন আজ শেষ হলো। ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে ডিসিদের করণীয় এবং তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যশোরে ১০৩৯ প্রাইমারি স্কুলে শহিদমিনার নেই

জেমস আব্দুর রহিম রানা: যশোরে এক হাজার ২৮৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৫০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদমিনার রয়েছে। বাকি এক হাজার ৩৯ টিতে শহিদমিনার

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাসের পরও, নিহত’ ৮১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার পরও গাজার আজ-জাওয়াইদা এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখান থেকেই আহত ব্যক্তিদের আনা হয়েছে হাসপাতালটিতে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে