‘আবার বাংলাদেশ নিয়ে তৎপর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র’

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ ইস্যুতে নীরবতা পালন শুরু করেছিল। ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ইস্যুতে ইউটার্ন প্রথম লক্ষ্য করা যায়। এই সময় হঠাৎ করেই বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুপচাপ হয়ে যায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত যিনি সবসময় ব্যস্ত থাকতেন, ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর তিনি অনেকটাই তার তৎপরতা কমিয়ে দেন। এরপর তিনি অবশ্য রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা করেন এবং ডোনাল্ড লু এর একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে মন্তব্য করে কিন্তু বাংলাদেশের ওপর কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোনো রকম নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এই নির্বাচনের কিছুদিন পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এর পরপরই আফরিন আক্তার সহ তিন সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন এবং সেখানে তারা বিএনপি-আওয়ামী বিরোধী কট্টরপন্থী কয়েকজন সুশীল এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উপনীত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অতীতের ভুল বোঝাবুঝি পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়। কিন্তু একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে তাদের তৎপরতা শেষ করেনি। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে বাংলাদেশের ব্যাপারে তৎপর হচ্ছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এই ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে মাথায় রেখেই বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন সহ বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে মাথা ঘামাচ্ছে বলেও একাধিক সূত্র মনে করছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরামর্শ দিয়েছে এবং নতুন করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

তাছাড়া বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার নতুন করে তৎপরতা শুরু করছে। বাংলাদেশের মানবাধিকারের বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে তারা তথ্য সংগ্রহ করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও ড. ইউনূস ইস্যুটিকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে এবং এই ইস্যুটি নিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে নতুন করে আলাপ আলোচনা করতে চাচ্ছে।’

তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন নতুন সরকারের ওপর কোন ধরনের চাপ দেবে না। বরং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তারা বিদ্যমান ইস্যুগুলোকে সমাধানের জন্য চেষ্টা করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যে ইস্যু গুলোকে সামনে আনছে তা হলো-বিরোধী দলের রাজনীতি করার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তারা সরকারকে পরামর্শ দিবে। আটক নেতাকর্মীদেরকে যেন মুক্তি দেওয়া হয় এবং রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করা হয় সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে। মানবাধিকার যেন সংরক্ষিত হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেন কমে আসে সে বিষয়টি নিয়েও তারা সরকারের সাথে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করবে।

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ড. ইউনূস যেন ন্যায় বিচার পান এবং তার বিচার যেন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয় সে ব্যাপারেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্ৰহ দেখাবে। আর এই সবকিছু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে নতুন করে তৎপর হচ্ছেন বলেও একাধিক সূত্র মনে করছেন।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর রচনা হবে: তারেক রহমান

অনলাইন ডেস্ক: দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর রচনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে দেশ ইমেজ সংকটে পড়বে বলেও

টুকুর পরিবার কখনো পালায় না, আগেও মানুষের পাশে ছিল, এখনো আছে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, অনেকে বলেন টুকু পালায়ে গেছে, আর আসবে না। টুকু পালায়নি….। সরকার জানে টুকু বিদেশের

গুলিস্তানে আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে সাংবাদিককে পেটাল ছাত্র-জনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গুলিস্থানে আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে দৈনিক গণকন্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মো. আলী মিথুনের ওপর হামলা করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। আজ রবিবার (১০ নভেম্বর)। দুপুরে

পিএসসি এলাকায় বিসিএস চাকরিপ্রার্থীদের লাঠিপেটা, আটক কয়েকজন

ডেস্ক রিপোর্ট: ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পিএসসি এলাকায় বিসিএস চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থানরতদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে যৌথবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায়

‘চমক আসছে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে’

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে শূন্যপদগুলো পূরণ হচ্ছে। পাশাপাশি বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপি আন্দোলনকে নতুন ভাবে সংগঠিত করার জন্য স্থায়ী

সাংবাদিকদের ১৫ সেকেন্ডে ফিনিশ করে দেব: চবির সমন্বয়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রচার করলে সাংবাদিকদের মাত্র ১৫ সেকেন্ডে ফিনিশ করে দেওয়ার হুমকি দিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি। গতকাল

বিজ্ঞাপনঃ

আরো খবর দেখুন

গ্রেপ্তারের ভয় ছাড়ছে না বিএনপি নেতাদের’ নিজস্ব প্রতিবেদক দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অংশ নিতে শুরু করেছেন। তিন মাস আত্মগোপনে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছেন, তখনো নতুনভাবে গ্রেপ্তারের ভয়ে আছেন তারা। বিএনপির অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আবারও নতুনভাবে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পুরোনো মামলায় নতুনভাবে আসামি দেখিয়ে আটকের ঘটনা ঘটছে। এমন অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভয়ভীতির মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি কিংবা এলাকা ছাড়া। জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি’) দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন প্রতিবাদ হিসেবে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। তারও আগে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি মহানগর ও জেলা পর্যায়ে একই কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। কিন্তু পুলিশ মঙ্গলবার রাজধানীতে কোথাও কালো পতাকা মিছিল করতে দেয়নি বলে বিএনপির অভিযোগ। বরং ওইদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুনভাবে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নতুনভাবে দায়েরকৃত ছয়টি মামলায় ৪৫৬ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ৭০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ওইদিন রাজধানীর উত্তরায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে এবং ধাক্কা দিয়ে জিপে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। যদিও তাকে পরবর্তী সময়ে পুলিশ ছেড়ে দেয়। সে সময় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ সংগঠনের ৪ নেত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিনে বাগেরহাটের রামপালে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল থেকে দলটির কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনিও কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছিলেন।’ বিএনপির অভিযোগ, গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর বিরোধীদের মাঠে দাঁড়াতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নেতাকর্মীদের যাকে যেখানে পেয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে। এখনো বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তল্লাশির নামে হামলা চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আকবর হোসেন এবং তার পুত্র সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন রনির বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুলিশ পরিচয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। ওই পরিবারের অভিযোগ, এ সময় বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও ‘লুটপাট’ করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বন্দুকের নলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর সরকারের তথাকথিত মন্ত্রি-এমপিরা এখন আরও বেসামাল কথাবার্তা বলছেন। অবৈধ সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিলে হামলা-নির্যাতন চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও বিরোধী নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে তল্লাশির নামে হামলা-ভাঙচুর করা হচ্ছে।’ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে মাঠের রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। অনেকেই কারাগার থেকে ছাড়াও পেয়েছেন। হামলা-মামলা উপেক্ষা করে কৌশলে কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের তিন মাস পর গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকা ও জেলায় জেলায় কালো পতাকা মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় অনেককে। তাদের এ উপস্থিতি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। আবারও রাজপথে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে সরকারবিরোধী দলগুলো। কিন্তু গত ৩০ জানুয়ারি সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় অনেকের মধ্যে আবারও কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়নে বিএনপি কিছুটা সময় নেবে। বিএনপির দপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ৪-৫ দিন আগে থেকে অদ্যাবধি মোট গ্রেফতার হন ২৫ হাজার ৬৪৪ জনের বেশি নেতাকর্মী। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন গণমাধ্যমকে বলেন, একতরফা ডামি নির্বাচন করেও স্বস্তিতে নেই অবৈধ সরকার। তাদের সবসময় পতনের আতঙ্ক তাড়া করছে। এজন্যই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের জামিন না দিয়ে দমন-পীড়ন অব্যাহত রেখেছে।’