
কক্সবাজার প্রতিনিধি: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সেন্টমার্টিনে রয়েছে মাত্র একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়—জিনজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটে নাকাল এই বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়টির মোট ছয়টি শিক্ষক পদের মধ্যে চারটি—যার মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদও রয়েছে—গত ১৪ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। বর্তমানে কেবল মোহাম্মদ তাহের ও মুহাম্মদ নুরুল হুদা নামে দুইজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় মোহাম্মদ তাহের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করায় পাঠদানে সরাসরি অংশ নেওয়ার সময় পান না। এক্ষেত্রে পুরো বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম প্রায় একাই সামলাচ্ছেন শিক্ষক নুরুল হুদা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক সংকটের ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে নিয়মিততা নেই, ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যাও দিন দিন কমছে। এক সময় যেখানে শিক্ষার্থী ছিল ৫০০ জনের বেশি, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১৮ জনে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণিতে ছড়িয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত ও মানসম্মত পাঠদান হচ্ছে না। এতে অভিভাবকদের আস্থা কমে গেছে, ফলে অনেকেই সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো থেকে বিরত থাকছেন।
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তাহের বলেন, “দুজন শিক্ষক দিয়ে এত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। আমি বাইরে কোনো দাপ্তরিক কাজে গেলে একজন শিক্ষকই পুরো দায়িত্ব পালন করেন।”
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, “দ্বীপের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের মূল ভূখণ্ডের স্কুলে পড়ালেও গরিব পরিবারগুলোর পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তাই দ্বীপের একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়টিতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরি।”
উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, “শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও অনেকেই কিছুদিনের মধ্যে বদলি হয়ে যান। ফলে সংকট থেকে যাচ্ছে। আমরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।”
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আরজু বলেন, “সেন্টমার্টিনে যেতে সাগরপথ পাড়ি দিতে হয়, যা অনেক শিক্ষকই করতে চান না। তবে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ সম্পন্ন হলে এ সংকট দূর হবে বলে আশা করছি।”