
নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি ব্যাংক আমানত। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশে প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স এলেও একই সময়ে ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে ব্যাংক আমানতের স্থিতি বেড়েছে ৭৫ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়ম, নগদ টাকার প্রতি মানুষের ঝুঁক, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও আস্থার সংকট ব্যাংকে আমানত না বাড়ার অন্যতম কারণ। যদিও মেয়াদি আমানতের বিপরীতে ১০-১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো, তবু আমানতকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসেনি।
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘বেসরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংকের সংকটজনক অবস্থান মানুষকে আতঙ্কিত করছে। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কিছুটা প্রবৃদ্ধি থাকলেও সার্বিকভাবে খাতটির প্রতি আস্থা ফিরছে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, মার্চ ২০২৫ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৬১১ কোটি টাকায়, যা গত বছরের জুনে ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ইস্যুকৃত নোটের পরিমাণও বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশে ইস্যুকৃত নোটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকাই ব্যাংক খাতের বাইরে রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।
ব্যাংক খাত নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ, গ্রাহকের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা না পাওয়া এবং দুর্নীতির কারণে নগদ টাকার প্রতি মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে বলেও মত দিয়েছেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ।
সরকারি ও বেসরকারি গবেষণার তথ্যানুযায়ী, প্রবাসী আয় ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই ভোগে চলে যায় এবং বাকি অংশ সঞ্চয়ে যায়। তবে সাম্প্রতিক আর্থিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক খাত নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে সেই সঞ্চয়ের অংশও কমে এসেছে। ফলে ব্যাংক খাতে রেমিট্যান্সের সরাসরি প্রভাব প্রত্যাশা অনুযায়ী পড়ছে না।