
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে আজ শুক্রবার। প্রতিবছর গাজীপুরের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য এক অনন্য মিলনমেলা। দীর্ঘ ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ইজতেমার আজকের এই পরিসর তৈরি হয়েছে, যা এখন বিশ্ব ইজতেমা নামে পরিচিত।
বিশ্ব ইজতেমার শিকড় উপমহাদেশের তাবলিগ জামাতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস আখতার কান্ধলভি ১৯২০ সালে ভারতের মেওয়াত অঞ্চলে তাবলিগি কার্যক্রম শুরু করেন। ইসলামের মৌলিক আদর্শের প্রচার ও মানুষকে ধর্মীয়ভাবে সচেতন করার লক্ষ্যেই তিনি এ আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
১৯৪৬ সালে মাওলানা আবদুল আজিজের উদ্যোগে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ইজতেমার আয়োজন করা হয়। এরপর ১৯৫৪ সালে ঢাকার লালবাগ শাহি মসজিদ ও চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে, ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এবং ১৯৬০ সালে ঢাকার রমনা উদ্যানে আরও বড় পরিসরে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম প্রসারিত হতে থাকলে ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে প্রথমবারের মতো ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ১৯৬৭ সাল থেকে সেখানে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতার পর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ১৬০ একর জমি তাবলিগ জামাতের জন্য বরাদ্দ দেয়, যেখানে প্রতিবছর লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন।
তাবলিগ সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশভাগের পর পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে পৃথক ইজতেমার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তবে বাংলাদেশে ইজতেমা আয়োজনের পরিবেশ, ভিসাপ্রাপ্তির সহজতা এবং মুসলমানদের আন্তরিকতা বিবেচনায় টঙ্গীকেই বিশ্ব ইজতেমার মূল কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
২০১১ সালের আগে বিশ্ব ইজতেমা একপর্বে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে ২০১১ সাল থেকে এটি দুই পর্বে বিভক্ত করা হয়। প্রথম পর্বে ৩২ জেলার মুসল্লিরা এবং দ্বিতীয় পর্বে বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন।
এছাড়া, টঙ্গীতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কিছু জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ২০২৩ সালের পর থেকে আবারও দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন শুরু হয়েছে, যাতে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন।
৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন: চলতি বছর ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে আজ শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি)। ফজরের পর আমবয়ানের মাধ্যমে। ৪ ফেব্রুয়ারি জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এটি শেষ হবে। এরপর চারদিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে এবং ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের ইজতেমা শেষ হবে।
বিশ্ব ইজতেমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি মুসলমানদের এক মহামিলনক্ষেত্র। এখানে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম প্রচার করা হয়, বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্য নিয়ে আলোচনা হয় এবং সর্বশেষ ইসলামী জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গির আদান-প্রদান হয়। বছরজুড়ে অপেক্ষার পর এই আয়োজন শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো মুসলিম বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।’