যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত সিরাজগঞ্জে ৮ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ ফুলজোড়,করতোয়া, ইছামতি,হুড়াসাগর ও চলনবিলসহ নদ-নদীর পানি বেড়েই চলছে। ইতিমধ্যেই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি। এতে বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে।

যমুনায় দ্রুত পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি ইউনিয়নের সানবান্ধা ঘাট হতে বিশুরি গাছা ঘাট ও শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের পাঁচিল,হাট পাঁচিল,জালালপুর ও সৈয়দপুর গ্রামে রাক্ষসী যমুনার তীব্র ভাঙ্গন চলছে। কোন কিছুতেই ভাঙ্গনের তাণ্ডব থামছে না। কবে যে যমুনার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটবে কেউই তা জানে না। রাক্ষসী যমুনার তীব্র ভাঙ্গনে জেলার তিনটি উপজেলার প্রায় ৮ শতাধিক বসতবাড়ি ও বিঘাকে বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

বুধবার (৩ জুলাই) সকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন,চলতি মৌসুমে যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসকল অঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার কাজিপুর, সদর ও শাহজাদপুরে শতশত ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

পাউবোর অফিস সূত্র জানায়,যমুনা নদীর ভাঙ্গন রক্ষায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়নের এনায়েতপুর থেকে পাচিল পর্যন্ত নদীতীরের সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মান,নদী খনন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ সমাপ্ত হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। নির্দিষ্ট সময়ে বাঁধ নির্মাণ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

স্থানীরা জানায়, ভাঙ্গনের মুখে থাকা সদর উপজেলার কাওয়াকোল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড় কয়রা কমিউনিটি ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রির জন্য সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস প্রকাশ্যে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এছাড়া দুটি মুজিব কেল্লা,সাড়ে ৪ কিলোমিটার পাকা রাস্তা,বর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে রয়েছে। গতকাল বিকেলে শাহজাদপুরের পাঁচিল গ্রামের কোবাদ মাস্টারের দোতলা ভবন নদীগর্ভে ধসে পড়েছে। এছাড়া বহু ঘরবাড়িও নদীতে ভেঙে পড়ছে। সহায় সম্বল হারিয়ে এসব পরিবারের মানুষ এখন নিঃস্ব। এসকল অঞ্চলগুলোতে দ্রুত ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা না নিলে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনাসহ অনেক ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে।

সদর উপজেলার কাওয়াকোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জিয়াউর রহমান (জিয়া মুন্সি) বলেন, নদী ভাঙ্গনে জেলার মানচিত্র থেকে মুছে যেতে চলেছে কাওয়াকোলা ইউনিয়ন। ভাঙ্গন রোধে পাউবো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কাওয়াকোলা ইউনিয়নের হাট বয়ড়া, দৌগাছী,বড়কয়রা,ছোট কয়রা, কৈগাড়ী দড়তা,চন্ডল বয়ড়া,বেড়া বাড়ী গ্রামে তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অনেক গ্রাম ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। ভাঙ্গনের কারণে কমিউনিটি ক্লিনিক নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে যেকোনো মুহূর্তে বয়কয়রা কমিউনিটি ক্লিনিক নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ কারণে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নিলাম বিক্রির কমিটি গঠন করে প্রকাশ্যে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পাকড়তলা গ্রামের লাল মিয়া ও পাঁচিল গ্রামের আলাউদ্দিন,আবুল কালাম শেখ,আয়নাল হকসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, চলতি মৌসুমে নদী ভাঙ্গনে এলাকার অন্তত ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে বহু মানুষ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বিপুল পরিমানে আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় আমরা এখন ভূমিহীন। কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। পাউবো’র ঠিকাদাররা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মান কাজ শেষ করতো, তাহলে আমাদের এই সর্বনাশ হতো না।

এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, নদী ভাঙ্গনে খুকনী, কৈজুরী ও জালালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গত কয়েক বছরে জালালপুর ইউনিয়নের পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলের শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। তিন বছরেও বাঁধ নির্মান প্রকল্প শেষ না হওয়ায় নদীতীরের মানুষজনকে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের গেজ রিডার মো. হাসান মামুন বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদী শহর রক্ষা বাধ পয়েন্টে পানি ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন,নদীর পূর্বপাড়ে চর জেগে উঠার কারণে প্রকল্প এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য নদীতে খনন কাজ চলছে। ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন রয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে জিও ব্যাগভর্তি বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

কান্নার আওয়াজ শুনে কবরস্থান থেকে নবজাতক উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়ক দিয়ে ইজিবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। সড়কের পাশে ছিলো হালকা জঙ্গলসহ কবরস্থান। নবজাতকের কান্নার আওয়াজ শুনে তিনি ইজিবাইক থামিয়ে জঙ্গলের ভেতরে যান।

সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে, নির্বাচন কখন হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো মিলে নির্বাচনের সময় ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের পর

‘সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের জন্য তিনশ নারীর গোয়েন্দা তদন্ত চলছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৭ জানুয়ারি। জাতীয় সংসদের পূর্ণতা পেতে আরও ৫০ টি সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে আগামী মাসে। সংবিধান

ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট, জানা গেল বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির পরিচয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক হলেন কৃষকদলের সভাপতি,প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

তাড়াশ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ৮টি ইউনিয়ন কমিটিতে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি গোপাল

পিএসসির দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নজরবন্দি, ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের মধ্যে অন্তত দু’জন