
দেলোয়ার হোসাইন মাহদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, বিনা কারণে যানবাহন জব্দ ও লাইসেন্স ইস্যুতে দুর্নীতির অভিযোগে দ্বিতীয় দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিএনজি চালকেরা। সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে এই কর্মবিরতি সড়ক অবরোধে রূপ নেয়। এতে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
সকালে জেলার নন্দনপুর এলাকায় শত শত চালক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে উভয় পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানবাহনের অভাবে অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন। চরম ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও রোগীবাহী স্বজনরা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর মডেল থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে চালকদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ তুলে নেওয়া সম্ভব হয়। তবে সিএনজি চালকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে।
জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. স্বপন মিয়া বলেন, “আমাদের ন্যায্য দাবির বিষয়ে বারবার প্রশাসনের দ্বারে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।”
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফফর হোসেন বলেন, “শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করানো হয়েছে। বিকেল ২টায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।”
জেলার অন্যান্য উপজেলা—সরাইল, আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরেও সিএনজি চালকদের কর্মবিরতির প্রভাব স্পষ্ট। অধিকাংশ অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় গ্রামীণ ও শহরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সিএনজি চালকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. আটক যানবাহন মুক্তি,
২. পারমিট অনুযায়ী চলাচলের পূর্ণ স্বাধীনতা,
৩. ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি বন্ধ।
সকালে রাধিকা, রামরাইল, সুলতানপুর, নন্দনপুর, কলেজ মোড় ও বিশ্বরোড এলাকায় দেখা গেছে, যাত্রীরা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থেকেও সিএনজি পাচ্ছেন না। অনেকে বাধ্য হয়ে হেঁটে, আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধ্য হচ্ছেন।
একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, “ধর্মঘটের আগাম কোনো ঘোষণা না থাকায় আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। অফিস, ক্লাস এমনকি রোগী নিয়েও সময়মতো পৌঁছাতে পারছি না। এটা অমানবিক।”
উপজেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, চলমান সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “সবার বক্তব্য শুনে যৌক্তিক ও টেকসই সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবই এখন আমাদের অগ্রাধিকার।”