‘পিটার ডি হাস: অর্জনের চেয়ে বিতর্ক বেশি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে তার কূটনৈতিক দায়িত্বে দুই বছর পূর্ণ করলেন। এ উপলক্ষে তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন লিখেছেন। সেই প্রতিবেদনে তিনি আব্রাহাম লিঙ্কনের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা যেমন দিয়েছেন, তেমনই নির্বাচন সুশাসন, মানবাধিকার এবং সুশীল সমাজের সাথে সুসম্পর্ক বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

একটি মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে তার দু বছরের কূটনীতিক মেয়াদকালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি অনেকগুলো স্পর্শকাতর এবং বিতর্কিত বিষয় খুব সঙ্গত কারণেই এড়িয়ে গেছেন। পিটার হাসের লেখার সূত্র ধরে যদি আমরা বিগত দুই বছরের পিটার হাসের কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা দেখব যে, পিটার হাস বাংলাদেশে যে মিশনে এসেছিলেন সেখানে তার অর্জনের চেয়ে তিনি বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন অনেক বেশি। প্রথম থেকেই তিনি তার নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। সবসময় তাকে মনে হয়েছে পক্ষপাতপূর্ণ। একটি বিশেষ গোষ্ঠী বা মতের প্রতি তার সহমর্মিতা বা সহানুভূতির দিয়েছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর সঙ্গে তিনি সম্পর্ক উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে নয়।

পিটার হাসের এই দুই বছরকে আমরা দু ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথম ভাগ যেখানে তাকে মনে হয়েছিল যে তিনি একজন শাসক বা নতুন ভাইসরয় হিসেবে এসেছেন। তিনি কর্তৃত্ব করতে চান। আর দ্বিতীয় ভাগে মনে হয়েছে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট এবং একটি বিশেষ মহলের স্বার্থ রক্ষার জন্য দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

পিটার হাস বাংলাদেশে আসার পরপরই ব্যস্ত সময় শুরু করেন। ২০০৯ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আস্তে আস্তে তার প্রভাব বলয় কমাতে থাকে। রাষ্ট্রদূতরা এসে বাংলাদেশের সুশাসন, গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ের চেয়ে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদির ক্ষেত্রে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর এই কারণেই রাষ্ট্রদূতরা অনেক বেশি প্রো পিপলস ডিপ্লোম্যাসিতে আকৃষ্ট হন। বিশেষ করে মার্শা বার্নিকাটে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একটি সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন এবং বাংলাদেশের জনগণের হৃদয় জয় করেছিলেন। কিন্তু পিটার হাস এসে এমন একটি পরিস্থিতি বা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশের প্রভু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলবে বাংলাদেশকে তাই করতে হবে। এটি করতে যেয়ে তিনি বাংলাদেশের ওপর এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব দেখানোর চেষ্টা করেন। যে কারণে প্রথম থেকেই তিনি জনগণের কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেন নিজের। পাশাপাশি এই সময় পিটার ডি হাস একটি নিজস্ব বলয় তৈরি করেছিলেন। যে বলয় তাকে যে রকম পরামর্শ, উপদেশ দিত, সেই পরামর্শ উপদেশ নিয়ে কাজ করত।

মার্কিন দূতাবাসে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত এরকম বেশ কিছু বাঙালি কূটনীতিকরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান গ্রহণে প্ররোচিত করেছিল বলেই অনেকের ধারণা। সেই কারণেই পিটার ডি হাস জিল্লুর রহমান, আদিলুর রহমান খান শুভ্রর মত বিতর্কিত ব্যক্তিদের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তাদের সাথে কূটনৈতিক সীমার বাইরে গিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেন, যেটা একজন কূটনীতিকের পক্ষে শুধুমাত্র দৃষ্টিকূট না, অনৈতিকও বটে।’

পিটার ডি হাস তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, যা সুস্পষ্ট ভাবে ধরা দিয়েছিল নির্বাচনের আগে আগে। তার মায়ের ডাকের নেতার বাসায় যাওয়া, বিএনপির সমাবেশের পর বিচার বিশ্লেষণ না করে বিবৃতি দেওয়া ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে যে নিরপেক্ষ অবস্থানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের থাকা কথা সেই নিরপেক্ষ অবস্থানে তিনি থাকতে পারেননি। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তার এই অবস্থান ছিল।

নির্বাচনের পর পিটার হাসের ইউটার্ন আরও লক্ষনীয়। তিনি এখন নতুন রূপে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছেন। মার্কিন পরিবর্তিত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দু বছর যদি আমরা মূল্যায়ন করি তাহলে দেখব যে, রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন খুবই সামান্য কিন্তু বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন অনেক বেশি।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ট্রাম্প’ কার্ড

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভূমিধ্বস বিজয় পেয়েছেন। বিভিন্ন জরিপে যেমনটি মনে করা হয়েছিল যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, বাস্তবে

যমুনাসেতুর পরিত্যক্ত রেলপথটি হোক সিএনজি অটোরিক্সার

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: উত্তর বঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত যমুনা রেলওয়ে সেতু পরীক্ষা মূলক ট্রেন চলেছে ২৬ নভেম্বর। জানুয়ারিতে যমুনা রেলওয়ে সেতু উদ্বোধন হলে মূল যমুনাসেতুর

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ব্যবসায়ীকে মারধর করে লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ

জুয়েল রানা: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় এক কাপড় ব্যবসায়ীর নগদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সহ একটি এন্ড্রোয়েড ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাত্র

দুই কন্যা সন্তানকে বিষপান করিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্বশুর বাড়ির অত্যাচারে দুই কন্যা সন্তানকে বিষপান করিয়ে আইরিন আক্তার (৩২) নামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৬ মার্চ)

বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ভিসা নিষেধাজ্ঞা সৌদি আরবের

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সৌদি আরব। এই নিষেধাজ্ঞা মূলত ওমরাহ, ব্যবসা এবং পারিবারিক ভিসার

৬ দফা দাবিতে কাজিপুরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

আবদুল জলিল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) ৬ দফা দাবিতে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিট এর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ কারিগরি