
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রোববার গাজায় ইসরায়েলি হামলার ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এদিন রাতেও গাজায় দুটি হাসপাতাল, একটি বালিকা বিদ্যালয় এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা বর্তমানে ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় সাড়ে ১০ হাজারই শিশু।এছাড়া এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬১ হাজার ফিলিস্তিনি। এরই মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন ১৩২ ফিলিস্তিনি। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৪ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৬০ হাজার ৮৩৪ জন আহত হয়েছেন বলে অবরুদ্ধ এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার (বাহিনী) গাজা উপত্যকায় পরিবারগুলোর ওপর ১২টি গণহত্যা চালিযেছে, যার ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩২ জন নিহত এবং আরও ২৫২ জন আহত হয়েছেন।’
জাতিসংঘের মতে, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর ইসরায়েলের বর্বর হামলায় ভূখণ্ডটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস গত রোববার বলেছেন, ‘গাজার লোকেরা নরকে বাস করছেন’ এবং সেখানে ‘কোনও স্থানই নিরাপদ নয়।’
রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে ডব্লিউএইচওর পাশাপাশি বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি’) ও ইউনিসেফ বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ ঠিক রাখতে মৌলিক পদক্ষেপে একটি পরিবর্তন আনা জরুরিভাবে প্রয়োজন। নিরাপদ ও দ্রুততার সঙ্গে ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিতে সীমান্তপথ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
চূড়ান্ত শান্তি সম্মেলনের আহ্বান চীনের:
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত অবসানে দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধান বাস্তবায়নে দিনক্ষণ ঠিক করতে একটি চূড়ান্ত শান্তি সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছে চীন। দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই এ আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বেইজিংয়ে গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রূপকল্প অর্জনে দেশটির প্রস্তাবিত সম্মেলন থেকে অবশ্যই ‘বাধ্যবাধকতাসহ’ কার্যকর ফল আসতে হবে।
মাও নিং বলেন, ‘সম্মেলন কবে এবং কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, সব পক্ষ মিলে আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করা উচিত বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকাকেও স্বাগত জানায় চীন।’
এদিকে যদিও মাঝে হামাসের সাথে এক সপ্তাহব্যাপী মানবিক বিরতির পর গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বিরতির পর শুরু হওয়া এই অভিযানে গাজায় হামলা আরও তীব্র করে দখলদার সেনারা। আর ইসরায়েলি লাগাতার এই আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।’