
ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে দেশবাসীর সহানুভূতি প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা যদি দেশের জন্যে কাজ করি, আপনাদের কাছে চারটি জিনিস প্রত্যাশা করি। প্রথমত আমরা আপনাদের ভালোবাসার কাঙাল, একটু ভালোবাসা উপহার দেন; ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে একটু সমর্থন ও সহযোগিতা চাই; এর পাশাপাশি জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনাদের যেন পাশে পাই আর এই জাতিকে বদলে ফেলার জন্যে আপনাদের অন্তরে যেন জায়গা পাই-এই চারটি জিনিস দেশবাসী যদি আমাদের উপহার দেয়, তাহলে আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো। ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের নয়, দেশে একটা সুশাসন কায়েম করতে চাই।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে যশোরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।’
নারীর অধিকার নিশ্চিতের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে নারীর অধিকার নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়। আমরা নাকি নারীদের বন্দি করে রাখবো। আমরা বলতে চাই, জামায়াত ইসলাম নারীদের মায়ের জাতি হিসেবেই দেখতে চাই। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হবে। তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, এদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘে চিঠি লিখে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিলাম। এখনও বলছি তদন্ত করুন। দোষী প্রমাণিত হলে নিজের বিচার দাবি করছি।
কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, জামায়াত ইসলামী দেশবাসীকে সেবার সুযোগ পেলে এদেশে চাঁদাবাজির অস্তিত্ব থাকবে না। দখলদারের অস্তিত্ব থাকবে না। ঘুষ থাকবে না। আমরা ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের প্রশ্রয়মুক্ত জাতি গড়তে চাই। জাতীয় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যেন আপনাদের পাশে পাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের আগে দেশ দুঃশাসনে পরিপূর্ণ ছিল। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন দুঃশাসন জুলুম করেছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, জুলুমের কষ্ট বেশি ছিল। বাংলাদেশ, বিশ্বের মানুষ কল্পনা করতে পারেনি ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন হবে। ফ্যাসিস্ট পতনের এই অর্জনের নেতৃত্ব আমাদের সন্তানদের। ফ্যাসিস্ট সরকার হাতুড়ি, হেলমেট বাহিনী গুলি চালিয়ে এ আন্দোলন দমাতে চেয়েছিল। আমাদের বীরসন্তানরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তাদের এই গৌরব, অভিভাবক হিসেবে আমাদেরও।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, আমরা যাদেরকে চোর, ডাকাত হিসেবে চিনি, তাদের সক্ষমতা কতটুকু? কিন্তু কলমের খোঁচায় যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে, তারা বড় চোর-ডাকাত। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরা ডাকাতি করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের পুঁজি দিতে পারছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতিকে সচল করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই অর্থনীতি আরও গতিশীল হোক। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও উদ্যোগী হোক।’
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। জামায়াত এমন শিক্ষা চায় যেখানে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষ করে শুধু সার্টিফিকেট নয়, একটা চাকরি নিয়ে বের হবে।
কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে আর কত চেতনা বিক্রি করবেন আপনারা। ৫৩ বছর জাতিকে দাসে পরিণত করেছেন। আমরা আর কারও দাসে পরিণত হবো না। আওয়ামী লীগ শোষণ করতে গিয়ে দেশে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। একটা গোষ্ঠীর কাছে সমস্ত বাংলাদেশের রিজিক হাইজ্যাক হয়ে গিয়েছিল। জাতীয় স্বার্থে আর কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।’
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একদল চাঁদাবাজি করে চলে গেছে। আরেক দল আসুক, আমরা চায় না। দেশে কি চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে’? হাতবদল হয়েছে। এজন্য তো এতে মানুষ শহীদ হননি। আমরা যেন শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি না করি। এসব ঘৃণিত কাজ করলে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি হবে। আপনারা এই ঘৃণিত কাজ করবেন না। ফুটপাত, হাটঘাট, বালুমহাল, জলমহাল দখল, চাঁদাবাজিতে কোন নেতাকর্মী পা দিবেন না।
মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মিথ্যা মামলায় নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। হত্যা মামলায় ৪শ-৫শ মানুষকে আসামি করা হচ্ছে। একজন মানুষ হত্যায় এই লোক কীভাবে জড়িত থাকে? প্রকৃত অপরাধীকে আসামিকে মামলা করুন। মামলা করে অর্থবাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীকে আসামি করুন, বিচার নিশ্চিত হবে।
দেশের সব মানুষের সমান অধিকার উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, দেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই। সবাই সাংবিধানিকভাবে সমান। ধর্ম-বর্ণ মিলেমিশে আমরা বসবাস করি। আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা যার যার ধর্মে করবে। কেউ যদি আপনাদের সংখ্যালঘু বলে- চিৎকার করে বলবেন, আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক, সবার অধিকার সমান।
যশোর জেলা উন্নয়ন বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ আমলের প্রাচীন জেলা যশোর। পুরাতন জেলা হিসেবে যশোরের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যশোরবাসী ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হয়েছে। এই শহরকে কেন্দ্র করে প্রাণকেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। পার্ক নেই, মাঠ নেই, জলাকার নেই। উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষের পা ছুঁয়ে নেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা ভুলে যায়। ভাবে পাঁচ বছর পর আবার পা ছুঁয়ে নিলে হয়ে যাবে। মাঝখানে তারা মানুষকে মনে রাখে না।
যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, মাওলানা আজিজুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আমির অধ্যাপক আলী আযম, সাতক্ষীরা জেলা আমির শহিদুল ইসলাম মুকুল, মাগুরা জেলা আমির এম বি বাকের, নড়াইল জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, শহীদ আবদুল্লাহর পিতা আবদুল জব্বার, যশোর জেলা নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, যশোর পূর্ব জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আবদুল আজিজ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান, যশোর জেরা কর্মপরিষদ সদস্য গাজী এনামুল হক, তৌহিদ হোসেন, ব্যবসায়ী আবদুল কাদের প্রমুখ।’