নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁপাইনবাবগঞ্জে তরুণী নিখোঁজের পর কথিত হত্যা মামলায় ৪০ দিন কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়েছেন রুবেল আলী নামে এক যুবক। আর গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি’) বিকেলে নতুন স্বামীসহ বাসায় ফিরে এসেছেন নিখোঁজ সেই তরুণী ববি বেগম। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী রুবেল আলী জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ক্যাপড়াটোলা গ্ৰামের মো. এনামুল হকের ছেলে। পুলিশের কথিত হত্যা মামলায় ৪০ দিন কারাগারে থাকার পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এখনো চলমান।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই হঠাৎ বাসা থেকে নিখোঁজ হয় ববি বেগম। এ ঘটনায় গত ২১ জুলাই রুবেল আলীকে অভিযুক্ত করে শিবগঞ্জ থানায় নিখোঁজের জিডি করে ববির বাবা রসুল আলী। তার কিছুদিন পর ২৬ জুলাই দুপুরে সদর উপজেলার লিলিখিলি মোড়ের একটি পুকুরে বস্তাবন্দি অর্ধগলিত অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ববি বেগমের পরিবার সেই নারীকে নিজেদের মেয়ে দাবি করলে ডিএনএ টেস্টের জন্য ল্যাবে নমুনা পাঠায় পুলিশ।
অথচ ডিএনএ রিপোর্ট এখনো না আসলেও; অধিকতর তদন্ত ছাড়াই থানায় দেখা করতে গিয়ে সন্দেহজনক আসামি হিসেবে রুবেল আলীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। পরে ৩ দিন রিমাণ্ডে নিয়ে রুবেল আলীকে নিযার্তনের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।’
এদিকে, পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলার কথিত নিখোঁজ তরুণী ববি বেগম গত বুধবার প্রায় ৭ মাস পর হঠাৎই একই উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়াল চৌকা গ্রামের নিজ বাড়িতে জীবিত হাজির হয়েছেন। আর তাকে জীবিত দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘেরাও করে মামলায় জেলে থাকা মো. রুবেল আলীর পরিবার ও তার স্বজনরা।
রুবেল আলী বলেন, আমি তখন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিছানায় শয্যাশয়ী ছিলাম। সেটা আমার এলাকাবাসী জানে। এখনতো মেয়েটি তার স্বামী নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার মাজেদ আলী নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে এসেছে। এখন সেতো ফিরে এসেছে। আমি যে নিরপরাধ সেটা আবারও প্রমাণিত হলো। আমাকে পুলিশের এসআই আফজাল হোসেন অনেক নির্যাতন করেছে। পুরো ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আমি দাবি জানাচ্ছি।
নিযার্তনের শিকার রুবেলের বাবা মো. এনামুল হক বলেন, বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে মেয়েটির পরিবার ও পুলিশ ফাঁসিয়েছে। এখন মেয়েটি জীবিত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। আমি যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি ও আমার ছেলেকে পুলিশ নির্যাতন করেছে। সেগুলোর সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের সকলের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। আমার ছেলের মতো আর কারো ছেলে যেন এমন ঘটনার স্বীকার না হয়। তার বিচারের দাবী জানাচ্ছি।’
বিনোদপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রউফ বলেন, ওই তরুণী জীবিত বাড়ি ফিরে আসায় এলাকায় শুরু হয়েছে তোলপাড়। সঠিক তদন্ত ও পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে হত্যা মামলায় নিরাপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি ও নিযার্তনের ঘটনায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।
এ নিয়ে কথিত হত্যা মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফজাল হোসেন কথা বলতে রাজি হননি। তবে নিযার্তনের অভিযোগ অস্বীকার করেন সদর মডেল থানার ওসি মো. মিন্টু রহমান। তিনি জানান, ববিকে উদ্দেশ্য করে নয়; বস্তাবন্দী লাশের ঘটনায় সন্দেহজনক আসামি হিসেবে পুলিশ রুবেলকে গ্রেফতার করে।
ওসি আরও বলেন, ববির নিখোঁজের ঘটনার সাথে রুবেলের হত্যা মামলার ঘটনাটি একেবারে ভিন্ন। তবে দুইটি ঘটনার অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেযা হবে।’