নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন সরকারের সাথে বিএনপি গোপন দর–কষাকষি করছে-এমন গুঞ্জন রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে। এই দর-কষাকষির কারণে বিএনপি বড় ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে না। তারা আবার জনসংযোগমূলক কর্মসূচিতে ফিরে যাচ্ছে-এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এই ধরনের বক্তব্য অস্বীকার করা হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপি সরকারের সাথে একটি আপোষ সমঝোতার পথে হাঁটছে এবং এর মধ্যস্থতা করছে পশ্চিমা দেশের কয়েকজন কূটনীতিক। আর এর ফলে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই আপোষ সমঝোতার কারণেই বিএনপি আবার জনসংযোগমূলক এবং এবং সাদামাটা কর্মসূচিতে ফিরে গেছে। নির্বাচনের পরে বিএনপির আরও কঠোর কর্মসূচি এবং হরতাল অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কূটনীতিকদের পরামর্শে বা চাপে বিএনপি সেই অবস্থা থেকে সরে এসেছে। এর মধ্যে সরকারের সাথে বিএনপির এক ধরনের আলাপ আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে-এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে যে বিষয়গুলো সরকারের কাছে চাওয়া হচ্ছে তার মধ্যে বিএনপির চাওয়া হলো আটক নেতাকর্মীদেরকে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা যেন জামিনে মুক্ত হতে পারেন তার ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে ইতিবাচক লক্ষণ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। বিএনপির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার জামিনের আবেদন গুলো এখন বিবেচিত হচ্ছে এবং তারা জামিনও পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসের শেষ দিকে অথবা আগের মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন নেতা জেল থেকে মুক্ত হতে পারেন।’
বিএনপির দ্বিতীয় যে চাওয়া তা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো এবং এ জন্য তাকে স্থায়ী জামিন দেওয়া। এই বিষয়টি বিভিন্ন শর্তের ওপর নির্ভরশীল। নির্বাচনের আগেও এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা মীমাংসিত হয়নি। এবার এটির মীমাংসার একটি চেষ্টা চলছে নতুন করে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে চাওয়া হল নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি বড় ধরনের কোন আন্দোলন করবে না। নতুন সরকারকে তারা স্বীকৃতি দেবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল ধ্বংসাত্মক জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি থেকে তারা সরে আসবে।
তবে শুধু যে আওয়ামী লীগ-ই বিএনপিকে ধ্বংসাত্মক জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি থেকে সরে আসতে বলছে-এমনটি নয়, আন্তর্জাতিক মহলও বিএনপিকে একই পরামর্শ দিচ্ছে। নির্বাচনের পরে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করছে কয়েকটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা।
তারা মনে করছে নির্বাচন ছিল একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং যেহেতু নির্বাচন হয়ে গেছে এখন কারোই কিছু করার নেই। এখন বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন ও সাংগঠনিক ভাবে নিজেদেরকে গুছিয়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। যেন তারা আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলো সরকারকেও বলছে বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করা এবং বিরোধী দলের যে সমস্ত নেতাকর্মীদেরকে আটক করা হয়েছে তাদেরকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো অনুরোধ করেছে। এই সবকিছু মিলিয়ে এই গোপন সমঝোতার মূল বিষয় হলো যা হবার হয়ে গেছে। এখন সরকার এবং বিরোধী দল স স অবস্থান থেকে কাজ করবে। বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে কোন কিছু করবে না। অন্যদিকে নির্বাচেনর আগে বিরোধী দলের ব্যাপারে সরকার যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল সেখান থেকে তারা নমনীয় হবে।’