মৌসুমী বায়ুর প্রভাব ও পাহাড়ি ঢলে সারাদেশে বৃষ্টিপাত, বন্যা পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে গত কয়েকদিনের অব্যাহত ভারী বর্ষণের ফলে বিভাগীয় ও আশ-পাশের জেলাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশপাশি ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির ফলে জেলা শহর ও উপজেলাসহ আহপাশের গ্রামের সুরক্ষা বাধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যেতেও দেখা যায় এসময়।

সিলেট
চলমান বন্যার মধ্যেই গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফের প্লাবিত হয়েছে সিলেট। নগরের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোয় পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। সোমবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ২৫ ঘণ্টায় সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

এসময় সিলেট নগরের বেশ কিছু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়াও নগরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপা শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন নগরের বাসিন্দারা।

এদিকে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারার ৪টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে অতিক্রম করার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে,সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর ওই পয়েন্টে আজ সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা, শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে সারী নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

এর আগে এ বিভাগে গত ২৮ মে থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে প্রথম দফায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে গত ১৬ জুন থেকে আবার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন সিলেটের বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে আজ পর্যন্ত ষষ্ঠবারের মতো জলাবদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সিলেট মহানগরের বাসিন্দারা।

সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে দিনভর ভারী বৃষ্টির ফলে বন্যা পরিস্থিতির ফের অবনতি ঘটে। সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি বাড়তে থাকায় উজানের পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়। পরে সোমবার রাত ৯টায় সুরমা নদীর পানি পৌর শহরের কাছে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা যায়।

এছাড়াও সুনামগঞ্জে সোমবারের বৃষ্টিতে পাঁচটি উপজেলায় আবার নতুন করে বন্যা দেখা মিলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে নেমে আসে উজানের পাহাড়ি ঢল। এ কারণে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় অনেক রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়। শহরের সুরমা নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতেও এসময় বন্যার পানি ঢুকে যায়। পাহাড়ি ঢলের পানি জেলার তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদ, সীমান্তের কলাগাঁও, বড়ছড়া, লাকমাছড়া হয়ে নামতে দেখা যায়। উজানের ঢলে জেলার সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিতের পাশপাশি রাস্তাঘাটও তলিয়ে যায়। এমনকি মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি প্রবেশ করে।

পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, নবীনগর, ওয়েজখালী, মল্লিকপুর, বড়পাড়া এলাকায় সুরমা নদীর পানি তীর উপচে রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরের আঙিনায় প্রবেশ করেছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা দু-একটি স্কুলে বিকেলে কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান এসব পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে ছাতক উপজেলা শহরের কাছেও সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা যায়।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ ও এর উজানে ব্যাপক বৃষ্টির কারণেই পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। মূলত উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে সুনামগঞ্জে রোববার সকাল নয়টা থেকে সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ১৭০ মিলিমিটার এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে একই সময়ে ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে বন্যার দেখা মিলে। একপর্যায়ে প্লাবিত হয় জেলার ১ হাজার ১৮টি গ্রাম। আট লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এসময় প্লাবিত হয়ে যায়। ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করে।

চট্রগ্রাম
বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামে তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ইতোমধ্যে জারি হয়েছে পাহাড়ধসের আগাম সতর্কবার্তা। যদিওবা এ সতর্ককতা আমলে নিচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টিতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। এমনকি প্রশাসনের সতর্কতার দিকেও কর্ণপাত নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোয় মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করা হলেও সাড়া মেলেনি তেমন। এদিকে নগরীর লালখান বাজারের বাসিন্দাদের জন্য লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বৃষ্টির মধ্যে বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে যাননি।

এছাড়াও চট্টগ্রাম নগরের ২৬ পাহাড়ে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে নগরের কাট্টলী ভূমি সার্কেলে। এদিকে আজ সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়েছে। উপযুক্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তাঘাটে পানি জমে যাওয়ায় এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী ও যাত্রীরা। নগরের জিইসি মোড়েও সড়কের এক পাশে হাঁটুসমান পানির দেখা মিলে।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, জিইসি মোড়ে সিটি ব্যাংক প্রান্ত থেকে সেন্ট্রাল প্লাজা পর্যন্ত সড়কের নিচে প্রায় ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি নালা থাকায় আর এটি সড়কের নিচে অবস্থিত হওয়ায় নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরেও একই অবস্থা হয়েছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত) চট্টগ্রামে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে’।

খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড়ধস, সাজেকে আটকা ৮ শতাধিক পর্যটক
মঙ্গলবার (২ জুলাই) ভোরের দিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে খাগড়াছড়ির আলুটিলার সাপমারা এলাকায় পাহাড় ধসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসময় সড়কের ওপর মাটি জমে থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নৈশ কোচের যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। এমনকি ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম যাতাযাতকারী যাত্রীরা। পরে সড়ক থেকে মাটি সরানোর কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এছাড়া জেলার মহালছড়ির ২৪ মাইল এলাকার সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায়। একইসঙ্গে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কেও যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে দীঘিনালা উপজেলার মেরুং স্টিল ব্রিজ এলাকায় পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি লংগদু সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের লিডার মো. জসিমউদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আজ সকাল সোয়া নয়টার দিকে স্থানীয় লোকজন, সড়ক বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মিলে সড়কের মাটি সরানোর কাজ শুরু করেন।

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার জানান, বাঘাইছড়িতে টানা ভারীবর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় দুই হাজার পরিবার পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হলেও এখনো কেউ আসেনি। আর বাঘাইহাট সড়কে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকে ৮ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। পানি না সরা পর্যন্ত কেউ বের হতে পারবে না বলেও জানান তিনি।

ফুলগাজী ও পরশুরাম জেলার বাঁধ ভেঙে উপজেলা প্লাবিত
তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তলিয়ে গেছে ফেনীর ফুলগাজী বাজার। ফলে বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হতে দেখা যায়। সোমবার (১ জুলাই) দুপুরের পর থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয়রা।

জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিনটি অংশে ভাঙন শুরু হয়। এতে করে পরশুরাম উপজেলার দক্ষিণ শালধর এলাকার জহির চেয়ারম্যানের বাড়িসংলগ্ন বাঁধের একটি অংশেও ভাঙন দেখা যায়।

এ বিষয়ে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হারুন মজুমদার বলেন, বাঁধ ভাঙনের কথা জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। লোকালয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া জানান, বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।

ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
ফুলগাজী ও পরশুরাম জেলার বাঁধ ভেঙে উপজেলা প্লাবিতের ফলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) পূর্বনির্ধারিত ফেনী জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে জেলা প্রশাসক।

ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ায় মঙ্গলবার (২ জুলাই’) সকাল ১০টার দিকে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আজকের পরীক্ষা স্থগিতের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এবার ফুলগাজীতে চারটি ও পরশুরামে দুইটি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে হু হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি। তবে, গতকাল তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও আজ তা সামান্য কমে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে এসব নদনদী অববাহিকার বেশ কিছু চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় এসব নীচু এলাকার শাক-সবজি, পাট সহ মৌসুমি ফসল। প্লাবিত এসব এলাকার বাসিন্দারা ভুগছেন বন্যা আতঙ্কে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ৯ টার দিকে পাউবো, কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গতকাল তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও গত ২৪ ঘন্টায় তা ১৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ধরলার পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অনান্য নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ৪১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৮, এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, তিস্তার পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

শেরপুরে পাহাড়ি ঢল
দেশজুড়ে কয়েক দিনের অব্যাহত ভারী বর্ষণ এবং সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর খালভাঙ্গা ও শ্রীবরদী উপজেলার সোমেশ্বরী নদীতেও ব্যাপকভাবে পানি বৃদ্ধির পাশপাশি দেখা যায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন। ফলে তিনটি উপজেলার অন্তত ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’

আজ মঙ্গলবার ভোরে ঝিনাইগাতী উপজেলার রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, চতল, বনগাঁওসহ কয়েক স্থানে বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ১৫-২০টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঢলের পানি উপজেলা শহরের প্রধান বাজারসহ বিভিন্ন অফিস ও বাড়িতে প্রবেশ করলে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, মহারশি নদীর ঝিনাইগাতী ব্রিজপাড় থেকে নদীর প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা অবৈধভাবে দখল করে বসতি স্থাপন করায় নদী অনেকটা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা জানান, স্ব স্ব ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরবর্তীতে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক অনুদান ও ঢেউটিন প্রদান করা হবে।

জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, জেলা প্রশাসনের নজরে বিষয়টি রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার যে কোন জরুরি বিষয় মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুতির পাশপাশি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

প্রেমিককে তুলে নিয়ে কুপিয়ে জখম করলেন প্রেমিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরে আশ্বাস দিয়ে বিয়ে না করায় প্রেমিক মদাদুল ইসলামকে (৩০) অপহরণ করে কুপিয়ে জখম করেছেন তার প্রেমিকা মনি খাতুনের (২৭) বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল’)

আবারও খুলে দেওয়া হলো কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং বিপদসীমায় পৌঁছায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট আবারো ছয় ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর’)

‘হিট অ্যালার্টের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়-বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস’

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়সহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার (২১ এপ্রিল) ভোর

বাংলাদেশ কি সিরিয়া হচ্ছে, না আফগানিস্তান?

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: রোববার ঢাকা শহরে প্রথম কর্মদিবস ছিল উত্তপ্ত ও সহিংসতায় ভরপুর। রোববার যদি ঢাকা সহিংসতার শহর হয়, তাহলে সোমবার ছিলো তাণ্ডবের শহর।

আবার ঢাকায় কেন ডোনাল্ড লু

নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। নানা কারণে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে অত্যন্ত আলোচিত একটি নাম।

২৫ ডিসির সবাই ছিল ছাত্রলীগের: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গতকাল ২৫ জন ডিসি দিয়েছেন। এই ২৫ জন ডিসির সবাই ছিল ছাত্রলীগের। এরা এখন ডিসি হয়ে