নিজস্ব প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর বাউফলে ঈদের দিন রাস্তায় প্রকাশ্যে এক তরুণীকে মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনার পর পুলিশ ও চেয়ারম্যানের সমঝোতায় শ্বশুর বাড়ি ফিরে গেছেন মিম সেই তরুণী।’
জানা যায়, নির্যাতিত তরুণীর নাম মিম। তার বাবার নাম মিলন। কালাইয়া লঞ্চঘাট এলাকায় তাদের বাসা। গত এক বছর আগে উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের কামরুল নামে এক তরুণের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামূল হক বলেন, ‘আমাকে বাউফল থানা থেকে ফোন দিলে আমি থানায় গিয়ে দেখি পুলিশ ছেলে-মেয়েকে থানায় নিয়ে এসেছে। পরে বাউফল থানার ওসি আমাকে বিষয়টি বিস্তারিত বলেন। সমঝোতার জন্য আমার জিম্মায় দিয়ে দেন। আমি ছেলে-মেয়েসহ উভয়পক্ষের গার্ডিয়ানদের নিয়ে আমার পরিষদে আজকে (১৩ এপ্রিল) বসি। উভয়পক্ষের কথা শোনার পরে তারা মিলেমিশে থাকতে চায়, তাই মিমকে তার শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেই। বর্তমানে তারা ভালো আছে। তাদের উভয়পক্ষের কোনো অভিযোগ নাই বলে তারা আমাকে জানিয়েছে।’
এ ব্যাপারে বাউফল থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি এবং তাদের থানায় ডেকে এনে বিষয়টি ফয়সালার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিন্মায় দেয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, কামরুল এবং মিম বিয়ের পর থেকে ঢাকায় থাকতেন। কামরুল ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঈদের আগের দিন কামরুল ও মিম ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। কামরুল মিমকে তার বাবার বাড়ি নামিয়ে দিয়ে তিনি তার বাড়ি চন্দ্রদ্বীপে চলে যান। ঈদের দিন কামরুল তার স্ত্রী মিমকে নিতে শ্বশুর বাড়ি এলে সে যেতে চায় না। মিম বলে, আমি কেন তোমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবে, দরকার হলে তোমার মা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।’ এক কথা দুই কথায় তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হলে কামরুল বাসা থেকে বেরিয়ে এলে তাকে বাসায় ফিরিয়ে নিতে মিম তার পিছু পিছু যায়। এ সময় তাকে প্রকাশ্যে মারপিট করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়।
ধারণকৃত ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ঈদের দিন (১১ এপ্রিল’) দুপুরে পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া শৌলা সড়কের সাদা পায়জামা ও কালো পাঞ্জাবি পরা ২৬-২৭ বছরের এক তরুণ ও কালো সেলোয়ার কামিজ পরা এক তরুণীর হাত ধরে পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। তরুণের পিছনের দিকে কালো পাঞ্জাবি অর্ধেক ছেঁড়া।
হেঁটে যাওয়ার একপর্যায়ে ওই তরুণ তরুণীকে একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনে কিলঘুষি মারছেন। চুল ধরে টানাটানি করছেন। ওই তরুণ সামনের দিকে হাঁটতে থাকলে তরুণীটি পিছন থেকে তার হাত ধরে ফেলে। এরপর খানিকটা দুজনে হেঁটে সামনে এগিয়ে গেলে তরুণীকে আবার ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়া হয়।
তরুণী উঠে পুনরায় ওই তরুণের হাত ধরে এবং সামনে হাঁটতে থাকে। একপর্যায়ে জনৈক জামাল স্যারের বাসার সামনে ওই মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে কিলঘুষি মারতে থাকেন এবং ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে ফেলে দেয় ওই তরুণ। এভাবে দফায় দফায় তরুণীকে মারধর করা হয়। ওই সময় রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও পথচারীরা চলাচল করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। ঈদের দিন সন্ধ্যার দিকে ৪৬ সেকেন্ড ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। নেটিজেনরা ভিডিওর নিচে নানা ধরনের কমেন্ট করছেন।,