নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি তার আভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক বিষয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে চলতি মাসেই। আগামীকাল থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আজ সন্ধ্যা থেকেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে আগামীকাল এবং পরশু এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই বৈঠকে তিনটি বিষয়ে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে’।
প্রথমত, বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পারিবারিক কারণে এবং স্বাস্থ্যগত কারণে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি এই বার্তা দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি যেমন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে তার অভিপ্রায়ের কথা জানিয়েছেন, তেমনি খালেদা জিয়াকেও তিনি কেন মহাসচিব থাকতে চান না সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শারীরিক অবস্থা ততটা ভালো না। তাছাড়া তার স্ত্রীও গুরুতর ভাবে অসুস্থ। আর এই দুই কারণেই তিনি মহাসচিব হিসেবে নয়, দলের একজন কর্মী হিসাবে কাজ চালিয়ে যেতে চান। দলে একজন পূর্ণকালীন মহাসচিব নিয়োগের ব্যাপারে তিনি অনুরোধ করেছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। এখন বিএনপিতে কে মহাসচিব হবে তা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে।
ধারণা করা হচ্ছে যে, আগামী দুইদিন যে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে সেখানে মহাসচিবের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা হতে পারে। মহাসচিব হওয়ার ব্যাপারে একাধিক নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী এগিয়ে আছেন ড. আবদুল মঈন খান। এছাড়াও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মির্জা আব্বাসের নামও আলোচনায় আছে বলে জানা গেছে।’
তবে কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় নাম রুহুল কবির রিজভী। কিন্তু রুহুল কবির রিজভীকে শেষ পর্যন্ত মহাসচিব করা হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক জিয়া কারও কাছে তিনি আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিত নন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে তা হল দলের কাউন্সিল অধিবেশন। বিএনপির মধ্যে থেকে স্পষ্ট বার্তা এসেছে যে, দলকে শক্তিশালী করার জন্য, সংগঠন গোছানোর জন্য কাউন্সিলের কোনো বিকল্প নেই। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় না। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরপরই বিএনপিতে নতুন করে কাউন্সিল এর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এ নিয়ে দলের মধ্যে এক ধরনের ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কবে কাউন্সিল হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করেন যে, কাউন্সিল অনুষ্ঠান করার উপযুক্ত সময় এখন নয়। কারণ বিএনপির বহু নেতা কারাগারে রয়েছে। অনেকে পলাতক জীবন যাপন করছে। সব কিছু মিলিয়ে বিএনপি যে অবস্থানে আছে তাতে কাউন্সিল করার জন্য একনও অনুকূল পরিবেশ নেই। কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে, অবস্থা যতই প্রতিকূল থাকুক না কেন, দলের সাংগঠনিক তৎপরতা এগিয়ে নিতে হবে, কাউন্সিল করতে হবে। এ নিয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলে একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে।
তৃতীয়ত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির পাঁচটি শূন্য পদ রয়েছে। এই শূন্য পদ অবিলম্বে পূরণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা। আর স্থায়ী কমিটির শূন্য পদগুলো কিভাবে পূরণ করা যায় সে নিয়ে দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। কেউ কেউ বলছেন যে, কাউন্সিল পর্যন্ত শূন্য পদগুলো পূরণ না করাই ভালো। কাউন্সিলের মাধ্যমে এটি করা হলে ভালো। আবার অনেকে মনে করছেন, এখন যে অবস্থা তাতে অনতিবিলম্বে কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে শূন্য পদগুলো পূরণ করা উচিত। এ রকম একটি বাস্তবতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ হতে পারে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।’