বড় সম্পাদকের ছোট মানসিকতা-১

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: ভয়াবহ জন-যানজটের ঢাকা শহরে প্রথম এসে দৌড়-ঝাঁপের রিপোর্টিং করার ইচ্ছেটা দু’দিনেই মরে গিয়েছিল। বছর সাতেক কেরানির কাজের (সম্পাদনা) পর ইচ্ছেটা ফের জেগে উঠল। বিরাটমাপের এক সম্পাদকের হাউজে সুযোগ নিলাম। ভাবলাম, এবার ‘জলবায়ু, পরিবেশ, জ্বালানি’তে ইনডেপথ কাজের গোপন বাসনাটা পূরণ হবে। কিন্তু দু’দিনেই হতভম্ব।

সম্পাদক যেন প্রভাবশালী কোনো মন্ত্রী বা নেতা। বাইরের সাম্রাজ্য সামলাতেই ব্যস্ত। কথা বলার জন্য বার্ত সম্পাদককেই সিরিয়াল দিতে হয়। কথায় কথায় ধমক আর অপদস্তের ভয়।পত্রিকার পাতাজুড়ে শুধুই রাজনৈতিক আবর্জনা, জলবায়ু, পরিবেশ সেখানে দুঃস্বপ্ন।

ক’দিনেই মনটা বিষিয়ে উঠল। বিষণ্ণ মন নিয়ে সুদিনের আশায় আবর্জনা ঘাঁটাঘাঁটিতে ব্যস্ত হলাম। যোগদানের আগেই বার্তা সম্পাদকের অনুমতি নিয়ে সপ্তাহ খানেক ধরে জেলার রাজনীতি নিয়ে হাফ ডজন রিপোর্ট এনেছিলাম। সেগুলোও আর প্রকাশ হলো না।

ভাবলাম, বৃক্ষ ভেবে ব্যাঙের ছাতার কাছে এসে অভিজ্ঞতা অর্জনও বড় প্রাপ্তি। কিন্তু মাস খানেক পর মাথায় বাজ পড়ল। এডমিন বলল, হাজিরা খাতায় নাকি আমার নাম উঠেনি। দৌড়ঝাঁপ করে অবশেষে নাম উঠল। মাস দুয়েক পর স্যালারি পেয়ে আরেক ধাক্কা। পনের দিনের স্যালারি কাটা পড়েছে।আবার যে স্যালারি ধরা হয়েছে তা আমার আগের অফিসের তিন ভাগের একভাগ।

ক্ষোভে অপমানে হাউজ ছাড়তে চাইলাম। সঙ্গিনী পায়ে পড়ল। বললাম, প্রথমত, সম্পাদক আমার সিভি দেখেননি, স্যালারি নির্ধারণে মতামত নেননি। পনের দিনের স্যালারি কেটেছেন। তার অফিসই তো আমলাতন্ত্রের ঘাঁটি। অথচ তিনি টকশোতে জাতিকে নীতিকথা শোনান, ধমকাধামকি করেন, আমলাতন্ত্রের গোষ্ঠী উদ্ধার করেন!

সাংবাদিকদের অসীম ধৈর্যের অধিকারী হতে হয়-এমন নীতিকথার চাপে বছর দুয়েক ধরে এক উপন্যাসের অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। এক পর্যায়ে পত্রিকায় মাল্টিমিডিয়া চালুর সিদ্ধান্ত হলো।অনলাইন ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে বার্তা সম্পাদকের মাধ্যমে সম্পাদক আমাকে অনলাইন ভার্সনের চিফ হিসেবে অফার করলেন। ‘ঘরপোড়া গরু’ তাই বেতন নির্ধারণ নিয়ে বাহাস চলল সপ্তাহ ধরে। দেখলাম, ‘কয়লা ধুলে আসলেই ময়লা যায় না’।

সঙ্গিনী বলল, কিছু ছাড় দিয়ে তোমার মেধা আর কাজের ধরনটা ওদের দেখিয়ে দাও প্লিজ। বার্তা সম্পাদককে বললাম, বেতন নির্ধারণে ভুল করলে পস্তাতে হবে। কিন্তু সঙ্গিনীর কথা রাখতে গিয়ে আবারও প্রবঞ্চনার শিকার হতে হলো। কাহিনি আরেকটা উপন্যাসের মতো। শেষ অবধি দেড়-দুই বছরের মাথায় সম্পাদকের মুখের ওপর চাকরিটা ছুঁড়ে দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।

ঘটনাটা মনে পড়ল, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টারদের ভূমিকা’ বিষয়ক সভায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের এক বক্তব্যের জেরে।তিনি বলেছেন, “আমরা চাই প্রত্যেক সাংবাদিক যেন ভালো বেতন পান। সাংবাদিকদের বেতন ৩০ বা ৪০ হাজারের নিচে নামলে পত্রিকা বন্ধ। ” প্রেস সচিব নিজেই বড়মাপের রিপোর্টার তাই সহানুভূতি দারুণ। কিন্তু সক্ষমতার পরেও প্রকাশক আর সম্পাদকদের যে ছোট মানসিকতা, সেটা বদলানো অনেকটা বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার মতো।

 

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

ট্রান্সজেন্ডারের অপারেশনে গিয়ে জানলেন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অপারেশনের মাধ্যমে ম্যাস্টেক্টমি অর্থাৎ স্তন অপসারণ করিয়েছেন ইতালির এক নাগরিক। এরপর ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ হিসেবে নিজেকে দাবি করা মার্কো প্রস্তুতি নিচ্ছেন অপারেশনের মাধ্যমে লিঙ্গ

সাবেক সচিবের বাসা থেকে ৩ কোটি টাকা ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এরমধ্যে ৩ কোটি এক লাখ ১০ হাজার ১৬৬

ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বললেন যশোরের এমপি আজিজুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সংঘাতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে শিক্ষার্থীদের

পাকিস্তানে বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন

অনলাইন ডেস্ক: পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। হাইকমিশনের

৪১ তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের সংবর্ধনা দিল উপজেলা প্রশাসন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: ৪১তম বিসিএসে সিরাজগঞ্জের দুর্গম চৌহালী উপজেলার ৩ জন বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। সুপারিশপ্রাপ্তরা হলেন- দেলোয়ার এইচ রাইন, জাকিয়া আবেদীন জনি ও

এতিম হয়ে ঘুরছেন ১৪ দলের শরিকরা’

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ১৪ দলের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ১৪ দলের নেতাদেরকে পাত্তা দিচ্ছেন না, ১৪ দলের প্রতি আওয়ামী লীগের বিন্দুমাত্র আগ্রহ