নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার হল চীন। গত এক যুগে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যক সম্পর্ক তরতর করে বেড়েছে। আর এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল। এবার নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তার একটি বড় কারণ ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক। অবশ্য এই মার্কিন মনোভাবকে প্রসারিত করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত।’
ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি কৌশলগত অবস্থান নেয়। বাংলাদেশের নির্বাচনকে সমর্থন জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যে কোনো তৎপরতা থেকে বিরত রাখে এবং নির্বাচনের পরে বাংলাদেশকে চীনের বলয় থেকে বের করে নিয়ে আসার একটি উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করে। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই দেখা যাচ্ছে, চীন বাংলাদেশের ব্যাপারে আরও বেশি আগ্রাসী। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত যেমন বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করছেন, বিভিন্ন ব্যবসায়িক বিষয়ে কথা বলেছেন তেমনই চীনের আন্তর্জাতিক বিভাগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস মিনিস্টার সুন হাইয়া এখন বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ করেন চীনের ক্ষমতাসীন দলের এই প্রভাবশালী ব্যক্তি।
১১ জানুয়ারি নির্বাচনের পর চীনই প্রথম দেশ যার একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাংলাদেশ সফর করলেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। বাংলাদেশের কূটনীতি সুস্পষ্ট। এই কূটনীতির মূল কথা হলো সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অভিন্ন চাওয়া পাওয়া রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত বাংলাদেশকে চীনের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করতে চায়। আর একারণেই ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ কি সহসা চীনের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত হতে পারবে’?
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক কৌশলগত সম্পর্ক তাতে বাংলাদেশ অনেকটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশের চীন নির্ভরতা এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। পরিস্থিতি এমন নয় যে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপের মত পুরোপুরি চীনের দিকে তাকিয়ে থাকে। বরং বাংলাদেশের অর্থনীতির নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। কিন্তু চীনের সঙ্গে গত ১০ বছরে যে সম্পর্কের উষ্ণতা ভারতের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের অস্বস্তির বিষয়টি প্রকাশ করেছে। তার চেয়েও বড় কথা হলো চীন যে সমস্ত উন্নয়ন প্রস্তাব নিয়ে আসছে তার সবগুলোর একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল এলাকাগুলোতে তারা এমন কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব বাংলাদেশকে দিয়েছে, যা ভারতের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর। আর এই সমস্ত স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সম্মতি জানায়নি। আর একারণেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ চীনকে নিয়ে কি করবে? চীনের সঙ্গে সম্পর্কের লাগাম কি বাংলাদেশ টেনে ধরবে নাকি যেভাবে সম্পর্ক আছে সেটি রাখবে অথবা ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করে নিজের দেশের স্বার্থে চীনের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবে।
যদি বাংলাদেশ চীনের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেয় তাহলে বাংলাদেশের জন্য তা একটি বড় আন্তর্জাতিক চাপ নতুন করে সৃষ্টি করবে। আর যদি বাংলাদেশ চীনের সাথে সম্পর্কের লাগাম আস্তে আস্তে টেনে ধরে তাহলে পশ্চিমা বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নতুন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং বাংলাদেশের ওপর যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপগুলো রয়েছে সে চাপগুলো কমবে। তাছাড়া চীন নির্ভরতা অর্থনীতির জন্য যে বিপজ্জনক তা বিভিন্ন দেশ থেকে বুঝা গেছে।’