নিজস্ব প্রতিবেদক: জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বর্তমান ও সাবেক সভাপতির সমর্থকরা। প্রতিষ্ঠানটির অফিসকক্ষে আজ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জানা গেছে, সরকার পতনের পর চার মাসের মধ্যে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. মাহমুদুর মোস্তাকিন নিশাতকে দু’বার এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরীকে একবার সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়ে চিঠি দেয় জাতীয় বিদ্যালয়। সর্বশেষ মোস্তাকিনকে সভাপতি মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
এর আগেও অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে গণস্বাক্ষর, অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছিলেন উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মী। সংশ্লিষ্টরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার সর্বশেষ মনোনীত সভাপতি মাহমুদুর মোস্তাকিন নিশাত সমর্থকদের নিয়ে কলেজে আসেন। খবর পেয়ে সদ্য সাবেক সভাপতি জিয়াউদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর সমর্থকরা তাদের বাধা দেন। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষ হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
কলেজ থেকে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর জিয়াউদ্দিন চৌধুরীসহ সভাপতি পদে তিনজন এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্যপদে তিনজনের নাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। পরে এ নাম বাদ দিয়ে গত ৩ অক্টোবর ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদুর মোস্তাকিনকে সভাপতি মনোনয়ন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের বহিরাগত অ্যাখ্যা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেন জিয়াউদ্দিনের সমর্থকরা।
গত ২০ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় আগের কমিটি বাদ দিয়ে জিয়াউদ্দিনকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সে অনুযায়ী তারা কলেজ পরিচালনা করছিলেন। সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় মাহমুদুর মোস্তাকিনকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির নাম তারা পাঠায়নি। কীভাবে বারবার সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পরিবর্তন করা হচ্ছে তাও তারা জানে না।
রিয়াদ মো. জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। সভাপতি পরিবর্তনের কোনো চিঠি পাইনি। হঠাৎ করে আগের সভাপতি দলবল ও বহিরাগত নিয়ে কলেজে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, এমন সংবাদে আমরা গেলে সংঘর্ষ হয়।’
মো. মাহমুদুর মোস্তাকিন নিশাত বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ আমাকে সভাপতি মনোনয়ন করেছে। সে অনুযায়ী আমি এবং আমার বিদ্যোৎসাহী সদস্য কলেজে আসি। এখানে বিএনপি নেতা আলমগীর চৌধুরী বাদশা ও তাঁর ভাই জিয়াউদ্দিন এসে আমাদের ওপর হামলা করেন। এতে আমার পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন।’
কমিটি গঠন নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন জানিয়ে আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবিদা সুলতানা কুইন বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত বর্তমান সভাপতি কলেজে এলে আগের সভাপতির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। একটি কমিটি তিনবার পরিবর্তন করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাসুদ রানা বলেন, এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি বা মামলা হয়নি।
নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’