নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারা দেশ থেকে মাঠ পর্যায়ে নেতাদের এই বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতি নির্ধারণী বক্তব্য রাখবেন।
বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ কোন্দল-বিরোধ মেটানোর জন্যই এই বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। বর্ধিত সভায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি জানানো হতে পারে বলে জানা গেছে।’
প্রসঙ্গত যে, গত কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কিন্তু, এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য দলের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারাকে উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে স্বাগত জানায়। অর্থাৎ, যারা দলের মনোনয়ন পাননি তারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান। আর এই সুযোগে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা স্বপদে বহাল থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে। এবং এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫৮ জন বিভিন্ন স্তরের নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী হয়েছেন।
স্বতন্ত্রদেরকে আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বাগত জানিয়েছেন। গণভবনে তাদেরকে ডেকে আপ্যায়িত করেছেন। এরপর প্রত্যাশা করা হয়েছিল যে, স্বতন্ত্রদের সঙ্গে সারা দেশে আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনকেন্দ্রীক বিভক্তির অবসান হবে, কিন্তু তার অবসান ঘটেনি। বরং, সারা দেশে আওয়ামী লীগ এখন নানা দল-উপদলে বিভক্ত। প্রতিটি জেলায় ৩-৪ টি অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের চেইন অফ কমান্ড সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আর এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলীয়ভাবে কোন প্রার্থীকে সমর্থনও দেওয়া যাবে না। ধারণা করা হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনের এই কৌশলগত অবস্থান আওয়ামী লীগের ঐক্য প্রয়াসে সহায়তা করবে। কিন্তু, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়েছে। এখন প্রতিটি উপজেলায় ৪-৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখানে আওয়ামী লীগের নেতা, সংসদ সদস্য, অন্য নেতা, যুবলীগের নেতাসহ বিভিন্নরা নির্বাচনে একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে কোন্দল আরও বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ কোন্দল নিরসনের জন্য বর্ধিত সভা ডেকেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতদিন শুধুমাত্র অনুরোধ করেছেন, আবেদন জানিয়েছেন। এবার তিনি কঠোর অবস্থানে যাবেন। যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে, দলের মধ্যে কোন্দল জিয়িয়ে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া যাবে, দলের স্বার্থবিরোধী তৎপরতার অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে। এছাড়া এই বর্ধিত সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সারা দেশে কোন্দল সম্পর্কে রিপোর্ট সংগ্রহ এবং আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে তা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি এই বর্ধিত সভায় কঠোর বার্তা দিবেন কোন্দল বন্ধ করার। কোন্দল বন্ধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি পর্যন্ত নেওয়া হতে পারে, এরকম একটি ঘোষণা আসতে পারে আওয়ামী লীগের এই বর্ধিত সভায়।’