সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে এক সহকারি শিক্ষিকার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজনদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহতের লাশ নিয়ে স্বজনরা সোমবার দুপুরে ওই শিক্ষিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপজেলার গাড়াবেড় চকপাড়া গোদাগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে মিছিল করেছে।
নিহতের ভাই খলিলুর রহমান জানান, ২০০১ সালে নিহত শিক্ষিকা রোকেয়া খাতুন গাড়াবেড়-চকপাড়া -গোদাগাড়ি (জিসিজি) উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শাখায় সহকারি শিক্ষক সমাজবিজ্ঞান হিসেবে যোগদান করেন। তখন থেকে তিনি এমপিওভূক্তি আশায়
বিনা বেতনে চাকরি করে আসছিলেন। খলিল আরও জানান, নিয়োগকালিন সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু ও প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন। সম্প্রতি এমপিও করে দেবার নামে আরও তিনলাখ পঁচানব্বই হাজার টাকা নেন। কিন্তু কাগজপত্র সঠিকভাবে না পাঠানোয় ওই শিক্ষিকার এমপিওভূক্তিক আবেদন বাতিল হয়। এরপর আবারো আবেদন করার জন্য গত শনিবার ওই শিক্ষিকার নিকট একলাখ টাকা দাবী করা হয়। সেটি দিতে না পারায় মানসিক বিষাদ থেকে ওইদিনই রাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ওই শিক্ষিকা। পরে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা নিলে সোমবার ভোরে তিনি মারা যান।’
নিহত শিক্ষিকা রোকেয়ার স্বামী আব্দুল করিম জানান, আমার স্ত্রী টাকা না দিতে পারার মানসিক চাপ থেকে মারা গেছেন। এজন্যে আমরা লাশ নিয়ে স্কুলে এসেছি। এসময় উত্তেজিত জনতা ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির উপযুক্ত শাস্তি দাবী করে বিদ্যালয় মাঠে মিছিল করে। এসময় চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ঘুষ হিসেবে নেয়া সব টাকা ফেরত চান তারা।
এদিকে খবর পেয়ে কাজিপর থানার তদন্ত ওসি ও পুলিশ ফোর্স নিয়ে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন ওই বিদ্যালয়ে যান। এসময় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বসা ছিলেন। ইউএনও উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে সঠিক তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দিলে নিহতের লাশ নিয়ে স্বজনেরা বিদ্যালয় মাঠ ত্যাগ করে।
এরপর ইউএনও’র প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি সম্প্রতি তিন লাখ পঁচানব্বই হাজার টাকা নেবার কথা স্বীকার করেন। পরে ইউএনও’র নির্দেশে ওই টাকা তিনদিনের মধ্যে ফিরে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন ওই দুইজন।
ইউএনও বলেন, ঘটনাটি বেদনাদায়ক। অনেকদিন বিনা বেতনে ওই শিক্ষিকা চাকুরি করেছেন। এখন বিধি মোতাবেক এমপিভূক্তি হবার বিষয়ে অর্থ লেনদেন কিংবা কাগজ রিজেক্ট হওয়া আরও দুঃখজনক। সঠিক তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার জন্যে আমি সুপারিশ করবো।
এদিকে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কাজিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ বাবলু জানান, নিয়ম মেনেই ওই শিক্ষিকার বেতন পেতে আবেদন করা হয়েছিলো। ফিরে আসায় আবারো পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিলো। এরইমধ্যে তার মৃত্যু বেদনাদায়ক। তবে এমপিওর জন্যে খরচা হিসেবে কিছু অর্থ তার নিকট থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়েছেন সেটা তারই কাজের জন্যে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, একটি কাগজ পাঠাতে সমস্যা হওয়ায় এবার ওই শিক্ষিকার এমপিও হয়নি। বিভিন্ন সময়ে অর্থ নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।’