নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী মার্চে উপজেলা নির্বাচন শুরু হচ্ছে। ঈদের আগে বা রোজার আগে প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা নির্বাচনের কৌশল কী হবে-এই নিয়ে আওয়ামী লীগের থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সারা দেশে স্বতন্ত্র এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান এবং নির্বাচন পরবর্তী অব্যাহত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিতে পারে আওয়ামী লীগ এমন গুঞ্জন রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তিন ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছেন।
প্রথমত, উপজেলা নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হবে না। এ জন্য অবশ্য আইন সংশোধন করতে হবে। আগেও উপজেলা নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হতো না। কিন্তু আওয়ামী লীগ দায়িত্ব গ্রহণের পরে উপজেলা নির্বাচন আইন সংশোধন করে এবং দলীয় প্রতীক নিয়ে উপজেলা নির্বাচনের পদ্ধতি চালু করে। এটি করার মূল কারণ ছিল সংগঠনকে শক্তিশালী করা। অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা-জেলা পরিষদ এবং সংসদ সদস্য, সবগুলো ধাপে যদি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয় তাহলে তৃণমূল থেকে সংগঠন বিস্তৃত হবে, তৃণমূলের নেতৃত্ব বিকশিত হবে এমন একটি ভাবনা ছিল আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে। কিন্তু এই ভাবনা বুমেরাং হয়ে যায়।’
গত কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনে দেখা গেছে, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছেন এবং অনেক স্থানেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের সূত্রপাত করেছে বলেও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও এটি অস্বীকার করেন। এরপর থেকেই উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার জন্য একটা তাগিদ ছিল আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার মধ্যে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার পক্ষে অনড় ছিলেন। কিন্তু এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রদের বিপ্লব এবং স্বতন্ত্রদের সঙ্গে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হলে সহিংসতা আরও বেড়ে যাবে এবং তৃণমূলে বিভক্তি চিরস্থায়ী রূপ পেতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ মনে করে, নির্বাচন ব্যবস্থারই পরিবর্তন দরকার। উপজেলা আইন সংশোধন করে দলীয়ভাবে নির্বাচন না করে আগের মতো স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সক্রিয় বিবেচনা করছে।
দ্বিতীয় যে বিকল্পটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ভাবছে তা হলো, উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে হবে। তবে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক কাউকেই দেবে না। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে উন্মুক্ত করে দেবে, কেউই দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। উল্লেখ্য, বিভিন্ন পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একই পদ্ধতি চালু করেছিল। সেখানে দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও অনেক পৌরসভা বা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় কাউকে দলীয় প্রতীক নৌকা দেয়নি। এবার নির্বাচনেও এমন একটি ভাবনা রয়েছে।’
তৃতীয়ত, আওয়ামী লীগ আগের অবস্থানে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। সেখানে দলীয় প্রতীক যারা পাবেন তারা নির্বাচন করবেন। আর নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমূখর করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি নির্ধারক বলছেন, নৌকা প্রতীক না থাকলে নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কম হতে পারে। ভোটারদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ম্লান হয়ে যেতে পারে। কারণ নৌকার একটা নিজস্ব ভোট রয়েছে, নৌকা এবং প্রতিপক্ষ নিয়ে নির্বাচন হলেই নির্বাচন উৎসবমূখর করা সম্ভব। শুধুমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলে নির্বাচন কতটা উৎসবমূখর হবে এ নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা ভাবনা রয়েছে। কারণ ইতোমধ্যে বিএনপি ঘোষণা করেছে, তারা উপজেলা নির্বাচন করবে না। এই বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণের জন্য আওয়ামী লীগ খুব শীঘ্রই আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।’