নিজস্ব প্রতিবেদক: একের পর এক চাপের মুখে পড়েছে সরকার। আর এই সমস্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে মূলত আমলাতন্ত্রের ভুল অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তের কারণে। জনবিচ্ছিন্ন আমলারা তাদের কর্তৃত্ব জাহির করার জন্য একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং সেই ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল দিচ্ছে সরকার। এরকম বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায়৷ যেমন-
১. কোটা সংস্কার: কোটা সংস্কার নিয়ে ২০১৮ সালে যখন আন্দোলন হয়েছিল, সেই আন্দোলনের এক পর্যায়ে কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, কোটা বাতিলের এই পরিপত্রটি ছিল অসাংবিধানিক। কারণ আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত অংশে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, নারী এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জন্য সরকার বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে এবং এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে কোনও কিছু বাড়িত করবে না। তাই যদি হবে তাহলে ওই আন্দোলনের সময় উচিৎ ছিল একটি কমিশন গঠন করা, যে কমিশনের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের জন্য একটি কর্মপন্থা চূড়ান্ত করা হবে এবং এই কমিশন সকল পক্ষের বক্তব্য নিয়ে নতুন করে একটি সুপারিশ করবে। কিন্তু আমলারা তড়িঘড়ি করে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্র জারি করার এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যার মাসুল দিতে হচ্ছে এখন।’
২. জাতীয় পেনশন স্কিম: জাতীয় পেনশন স্কিম ও অকার্যকর হচ্ছিল আমলাদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে। আমলারা কখনও জাতীয় পেনশন স্কিমকে সফল করতে পারবেনা। জাতীয় পেনশন স্কিমকে সফল করার জন্য এই ক্ষেত্রে যারা প্রাজ্ঞ, যারা এই সব নিয়ে কাজ করেন তাদের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জাতীয় পেনশন স্কিমের দায়িত্ব দেওয়া হয় যথারীতি আমলাদের ওপর এবং আমলারা জনগণের কাছে এটিকে আকর্ষণীয় পেনশন স্কিম হিসাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমলারা এটিকে স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ওপরও এটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ এই বিষয়টি সুন্দর এবং সুষ্ঠু সমাধান করা যেত। সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ নিয়ে কর্মশালা, বৈঠক ইত্যাদি করে এক একটি সুবিন্যস্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রত্যয় স্কিম চালু করা যেত। সেটি হল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যেভাবে কারও সাথে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এটি হলো একটি আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত।’
৩. দুর্নীতি: আমলাদের সীমাহীন লাগামহীন দুর্নীতির কারণেই সরকারের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যে সমস্ত দুর্নীতির কাহিনী গুলো বেরোচ্ছে তার সবই সরকারি চাকরিতে থাকা ব্যক্তিরা। আর এ কারণেই আমলাদের দায় মুক্তি, তাদের বিচারের ক্ষেত্রে এক ধরনের নমনীয় মনোভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে এই দুর্নীতির উদ্ভব ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন। ২০২০ সালে কোভিড শুরু হওয়ার পর আমলাদের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা যায়। আর সে সময় থেকে আমলা সব কিছুর ওপর একটা প্রভাব বিস্তার এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। ব্যাংকিং খাতের অবস্থা, অর্থনীতির দুরাবস্থা কিংবা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা সব কিছুই আমলাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হচ্ছে বলেই অনেকে মনে করেন। আর এ কারণে রাজনৈতিক সরকারের চালকের আসনে রাজনীতিবিদদের থাকা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।’