ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: অ্যান্টিম্যাটার। মানে প্রতিপদার্থ। রহস্যময়। ভীষণ দামী, আর ভয়ংকর! অল্প কিছুটা প্রতিপদার্থ দিয়ে ঘটানো যাবে বিশাল বিস্ফোরণ! হিরোশিমা-নাগাসাকির চেয়ে অনেক গুণ ভয়াবহ! অবিশ্বাস্য লাগছে? আসলে সত্যি। অন্তত তাত্ত্বিকভাবে। এই বিষয়টা দেখিয়েছিলেন ড্যান ব্রাউন। তাঁর অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস বইতে দেখা যায় অ্যান্টিম্যাটার বোমা। বিস্ফোরণ হলেই সব শেষ। আসলেই সম্ভব বাস্তবে?
আগে বলি, প্রতিপদার্থ কেন দামী। কারণ, পৃথিবীতে পাওয়া যায় না সেই অর্থে। পাওয়া যায় না গোটা মহাবিশ্বেও। একদম নেই, তা নয়। আছে বাস্তবেই। তবে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।
যেমন কলার কথাই ধরুন। এই কলাতেও আছে প্রতিপদার্থ! আসলে, পটাশিয়ামের আইসোটপ পটাশিয়াম-৪০। তেজস্ক্রিয়। এটাই থাকে কলায়। তেজস্ক্রিয় পদার্থ ভাঙতে থাকে নিজে নিজে। পটাশিয়ামও ভাঙে। প্রতি ৭৫ মিনিটে এই ভাঙার সময় বের হয় একটা পজিট্রন। মানে অ্যান্টিইলেকট্রন। এরকম আপনার-আমার দেহেও আছে পটাশিয়াম-৪০। অর্থাৎ অ্যান্টিম্যাটার আছে বাস্তবেই। তবে যৎসামান্য। তার ওপর, ব্যবহারযোগ্য নয় সে অর্থে।
অথচ ছিল সৃষ্টির শুরুতে। বিপুল পরিমাণে। ঠিক পদার্থের সমান।
ফলে প্রতি ১০০ কোটি প্রতিপদার্থের বিপরীতে তৈরি হয়েছে ১০০ কোটি ১টি পদার্থের কণা। মাত্র ১টি বেশি ১০০ কোটিতে।
মহাবিশ্বের সূচনার কিছুকাল পরের কথা সেটা। শক্তি থেকে সৃষ্টি হচ্ছিল ভর। আবার ভর ভেঙে পরিণত হচ্ছিল শক্তিতে। মানে ভর-শক্তির রূপান্তর। ফর্মুলাটা দিয়ে গেছেন আলবার্ট আইনস্টাইন। জার্মান এই বিজ্ঞানীর বিখ্যাত সূত্রটি জানেন আপনিও। E = mc2। E মানে শক্তি। m হলো ভর। আর c আলোর বেগ। মানে, ভর যাই হোক, আলোর বেগের বর্গ দিয়ে গুণ দিলে পাওয়া যাবে সমপরিমাণ শক্তি। এই ফর্মুলা মেনেই চলছিল ভর-শক্তির রূপান্তরের খেলা।’
কিন্তু ভর কীভাবে পরিণত হয় শক্তিতে? এখানেই প্রতিপদার্থের কারিশমা। বিপরীত পদার্থের সঙ্গে সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে যায়। বেরিয়ে আসে নিখাদ শক্তি!
এসব প্রতিপদার্থ তাহলে কোথায় গেল? এ এক বড় রহস্য। সম্ভাব্য উত্তর আছে অবশ্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো একভাবে ভেঙে গেছে পদার্থ-প্রতিপদার্থের ভারসাম্য। সেই সৃষ্টির শুরুতেই। বিগ ব্যাংয়ের কিছুকাল পরে। ফলে প্রতি ১০০ কোটি প্রতিপদার্থের বিপরীতে তৈরি হয়েছে ১০০ কোটি ১টি পদার্থের কণা। মাত্র ১টি বেশি ১০০ কোটিতে। অথচ সেটাই গড়ে দিয়েছে পার্থক্য। সব প্রতিপদার্থ ধ্বংস হয়ে গেছে, সমপরিমাণ পদার্থের সঙ্গে সংঘর্ষে। ওই একটি একটি করে পদার্থের কণা বাকি রয়ে গেছে। গড়ে তুলেছে আজকের মহাবিশ্ব।
সবই না হয় বোঝা গেল। কিন্তু জিনিসটা কী? জানা দরকার। জানব সংক্ষেপে। তবে কিনা, একটু পেছনে ফেরা প্রয়োজন।
২, ১৯৩০ সালের কথা। ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল ডিরাক হিসাব কষছেন। বারবার দেখছেন, যেকোনো পদার্থের বিপরীত কণা থাকতেই হবে। কেমন হবে এসব কণা? সব এক, শুধু চার্জটা ভিন্ন। আর শক্তি ঋণাত্মক। যেমন ইলেকট্রন। পদার্থের কণা। এর প্রতিকণার চার্জ ধনাত্মক। প্রতিইলেকট্রন। আরেকটা সুন্দর নামও আছে-পজিট্রন।
সহজ কথায় বিষয়টা তা-ই। সব এক, চার্জ আর শক্তি উল্টো। যেমন হাইড্রোজেনের পরমাণু। কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস। ওতে আছে একটা প্রোটন। চারপাশে ঘুরছে ইলেকট্রন। ইলেকট্রন মৌলিক কণা। প্রোটন তা নয়। ভাঙলে পাওয়া যায় কোয়ার্ক।
প্রোটন তৈরি দুটি আপকোয়ার্ক আর একটা ডাউনকোয়ার্ক দিয়ে। আপকোয়ার্কের চার্জ + ২/৩। আর ডাউনকোয়ার্কের চার্জ -১/৩। এসব মিলেই প্রোটনের চার্জ +১। এর প্রতিকণাটা কেমন হবে? দুটো প্রতিআপকোয়ার্ক থাকবে। চার্জ হবে -২/৩। আর থাকবে একটা প্রতিডাউনকোয়ার্ক। চার্জ হবে +১/৩। যোগ-বিয়োগ করে পাবেন -১। সেটাই প্রতিপ্রোটনের চার্জ।
এই প্রতিপ্রোটনের চারপাশে পজিট্রন বসিয়ে দিলে? পেয়ে যাব প্রতিহাইড্রোজেন।
শুধু তাই নয়। যেসব মৌলের নিউক্লিয়াসে নিউট্রন থাকে? এরও আছে প্রতিকণা।
নিউট্রনের চার্জ শূন্য। প্রতিনিউট্রনেরও। এটাও যৌগিক কণা। তাই বাইরে ঠিকঠাক, তবে ভেতরে উল্টো। নিউট্রনে থাকে একটি আপকোয়ার্ক (চার্জ +২/৩) আর দুটি ডাউনকোয়ার্ক (চার্জ -১/৩)। প্রতিনিউট্রনে ঠিক উল্টো। একটি প্রতিআপকোয়ার্ক (চার্জ -২/৩) আর দুটি প্রতিডাউনকোয়ার্ক (চার্জ +১/৩)। সব মিলে মোট চার্জ শূন্য।
এভাবে যেকোনো মৌলেরই হতে পারে প্রতিমৌল। হাইড্রোজেনের প্রতিহাইড্রোজেন। হিলিয়ামের প্রতিহিলিয়াম।
কিন্তু পৃথিবীতে তো নেই এসব। এ নিয়ে এত আলাপ কেন? ওই যে বললাম, একটুখানি পেলেই হয়েছে! ঘটানো যাবে ভয়ংকর বিস্ফোরণ। ফর্মুলাটাও বলেছি। E = mc2। তবে শুধু মন্দ নয়, লাগে ভালো কাজেও। মেডিকেল ইমেজিংয়ে কাজে লাগে পজিট্রন। ক্যানসার চিকিৎসায় লাগে প্রতিপ্রোটন। রকেটের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা গেলে? অল্প জ্বালানি দিয়ে যাওয়া যাবে বহুদূর। সম্ভব? আবারও দামের প্রশ্ন। বানানোও ভীষণ কঠিন।
জ্বালানি হোক বা বোমা-শক্তি হবে প্রচণ্ড। কতটা? একটু তুলনা করা যাক।
কার্বন, অক্সিজেন এবং আরও যা কিছু আছে জীবদেহে-ভেতরে ঘটছে বিক্রিয়া। এভাবে জীবেরা শক্তি উৎপাদন করে নিয়মিত। সামান্য পরিমাণে।
৩ এক টুকরো পদার্থকে ভাবুন ফুয়েল। মানে আসল জ্বালানি। আর প্রতিপদার্থ হলো স্পার্ক। স্ফুলিঙ্গ। জ্বালানির সবটা শক্তি বের করে আনবে। তেঁড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে শক্তি। প্রাকৃতিকভাবে শক্তি উৎপাদনের আরও ভালো কোনো উপায় নেই।
সব জীবই রাসায়নিকের কারখানা। কার্বন, অক্সিজেন এবং আরও যা কিছু আছে জীবদেহে-ভেতরে ঘটছে বিক্রিয়া। এভাবে জীবেরা শক্তি উৎপাদন করে নিয়মিত। সামান্য পরিমাণে। একটু একটু করে। পার্থক্যটা আসলে সময়ের। বিশাল বিস্ফোরণে একসঙ্গে বেরিয়ে আসে অনেক শক্তি। আর জীবদেহে একটু একটু করে বের হতে থাকে। জীবনভর।
রাসায়নিক বিক্রিয়াও এমন-একইরকম, কিন্তু দ্রুতগামী। বহুগুণে। ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করলে শক্তি পাই আমরা। সেই শক্তি দিয়ে বয়ে বেড়াই শরীর। নানা কাজকর্ম করি। এই সবটা শক্তি যদি মিলিসেকেন্ডের মধ্যে বেরোয়? মানে সেকেন্ডের ১ হাজার ভাগের একভাগ সময়ে? কী হবে? বিস্ফোরণ। আক্ষরিক অর্থেই!
সে যাক। রাসায়নিক বিক্রিয়ার কথা বলি। যত ভয়ংকরই মনে হোক, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাসায়নিক বিক্রিয়াতেও পরমাণুর সামান্য শক্তি কাজে লাগে। একশ কোটি ভাগের সর্বোচ্চ একভাগ। কারণ, এ সময় আদান-প্রদান হয় ইলেকট্রন। নিউক্লিয়াসে আর কিছু হয়। আর পরমাণুর বেশির ভাগ শক্তি জমা থাকে ওখানেই। নিউক্লিয়াসে।
নিউক্লিয়াস ভাঙলে কী ঘটে? হিরোশিমা-নাগাসাকি। মানে পারমাণবিক বিস্ফোরণ। ভয়ংকর। যেকোনো শহর মিশে যাবে ধূলায়। অথচ এতেও বেরিয়ে আসে পরমাণুর শক্তির এক হাজার ভাগের মাত্র এক ভাগ। সূর্যের ভেতরের ফিউশনে? কিংবা হাইড্রোজেন বোমায়? সেখানেও বের হতে পারে একশ ভাগের এক ভাগ শক্তি। মাত্র আধা গ্রাম প্রতিপদার্থের সঙ্গে আধা গ্রাম পদার্থের সংঘর্ষে ঘটতে পারে হিরোশিমার মতো বিস্ফোরণ!
এক কেজি প্রতিপদার্থ ধ্বংস হলে বেরিয়ে আসে তার দশ বিলিয়ন গুণ (বা ১০০০ কোটি গুণ)!
কেজি হিসাবে ভাবি। এক কেজি টিএনটি (TNT) বিস্ফোরিত হলে যে শক্তি বেরিয়ে আসে, এক কেজি প্রতিপদার্থ ধ্বংস হলে বেরিয়ে আসে তার দশ বিলিয়ন গুণ (বা ১০০০ কোটি গুণ)! কেজি প্রতি হিসাবে, নিউক্লিয়ার ফিশনের চেয়ে ১০০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। আর ফিউশন থেকে অন্তত ১০০ গুণ!
এসবই তাত্ত্বিক হিসাব। বাস্তবে কি ঘটানো যাবে এমন বিস্ফোরণ?
বুঝতে হলে এক-আধটু হিসাব কষতে হবে। সহজ হিসাব। শুধু একটু মনোযোগ দিলেই হবে। চলুন, দেখা যাক।
৪ প্রথমে চলুন, হিরোশিমা বোমার সঙ্গে তুলনা করি। আসলেই কি এর এক গ্রাম-বা আধা গ্রাম পদার্থ, আধা গ্রাম প্রতিপদার্থ-ওরকম ২০ কিলোটন পারমাণবিক বোমার সমতুল্য হতে পারে? পারে। আসলে, ভারী হবে প্রতিপদার্থের পাল্লাই।’
এক কিলোটন টিএনটি সমান ৪ মিলিয়ন মিলিয়ন (৪.২×১০১২) জুল। সংক্ষেপে, ৪ টেরাজুল। জুল হলো শক্তির একক। (জুলের ১ হাজার গুণ কিলোজুল। মানে ১০৩ জুল। কিলোর ১ হাজার গুণ মেগা। মানে ১০৬। মেগার ১ হাজার গুণ গিগা। মানে ১০৯। গিগার ১ হাজার গুণ টেরা। ১০১২! কত বড়, ভাবুন একবার।) এই শক্তি আবার ভর ও বেগের বর্গের গুণফলের সমানুপাতিক (E ∝ mv2)। ধরুন, ২ কিলোগ্রাম ভরের কোনো বস্তু সেকেন্ডে এক মিটার বেগে গতিশীল। এর গতিশক্তির মান-ই এক জুল। বলে রাখা ভালো, এটি নিউটনের সূত্র মেনে হিসাব করা। আপেক্ষিকতা ধরা হয়নি হিসেবে। সে হিসাবে গতিশক্তি = ½ mv2।
কিলোগ্রামের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে বলে ১ গ্রাম বা ১০-৩কেজি। আলোর গতি সেকেন্ডে ৩ লাখ কি.মি. বা ৩×১০৮ মি./সে.। এবারে, E = mc2 সূত্র m = ১ গ্রাম বসিয়ে দেখি। পাব, E = ১০-৩×৯×১০১৬ কেজি-মি.২/সে.২। এ থেকে মোট শক্তির মান পাব, E = ৯×১০১৩ জুল বা ৯০ টেরাজুল।
৯০ টেরাজুল সমান ২১.৪ কিলোটন টিএনটি। প্রতিপদার্থের এক গ্রামের মধ্যে থাকবে এই পরিমাণ শক্তি!
একটু আগেই দেখেছি, ১ কিলোটন টিএনটি সমান ৪.২ টেরাজুল। তার মানে, ৯০ টেরাজুল সমান ২১.৪ কিলোটন টিএনটি। প্রতিপদার্থের এক গ্রামের মধ্যে থাকবে এই পরিমাণ শক্তি! বোঝাই যাচ্ছে, একই পরিমাণ শক্তি জমা থাকে পদার্থের এক গ্রামের মধ্যেও। সে জন্য, আগেই বলেছি, হিরোশিমায় ফেলা বোমার মতো ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে আমাদের লাগবে কেবল মাত্র আধাগ্রাম প্রতিপদার্থ। শর্ত প্রযোজ্য।
ধরে নিচ্ছি, সবটা শক্তি বেরিয়ে আসবে একসঙ্গে। একটা একটা করে বিস্ফোরিত হলে আর লাভ হবে না। হিসহিস শব্দ হবে বড়জোড়। সেটাও হতে পারে, তবে ধরে নিচ্ছি সব শক্তি একসঙ্গেই বেরোবে।
কথা হলো, এক গ্রাম প্রতিপদার্থ বানাতে কত সময় লাগবে? কিংবা, এক গ্রামের একশ কোটি ভাগের এক ভাগ, এক ন্যানোগ্রাম (ngm) বানাতে কত সময় লাগবে’?
এক গ্রাম প্রতিপ্রোটন বানাতে ৬×১০২৩টা প্রতিপ্রোটন লাগে। আর, এক গ্রাম পজিট্রন বানাতে পজিট্রন লাগে ১০২৬টা। প্রতিপ্রোটন উত্পাদনের সবচেয়ে বড় উত্স যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মিল্যাব গবেষণাগার। ২০০৭ সালের জুনে তারা রেকর্ডসংখ্যক প্রতিপ্রোটন উত্পাদন করে-১০১৪টি। প্রতিমাসে এই পরিমাণ উত্পাদন করলেও, এক বছরে সর্বোচ্চ ১০১৫টির মতো প্রতিপ্রোটন উত্পাদন করা যায়। ১০১৫টির মতো প্রতিপ্রোটন সমান ১ গ্রামের ১.৫/বিলিয়ন ভাগ। অর্থাৎ, ১ ন্যানোগ্রামের কিছুটা বেশি। এই সব প্রতিপ্রোটন এক করে, এদেরকে যদি ১.৫ ন্যানোগ্রাম পদার্থের সংস্পর্শে এনে ধ্বংস করে দেওয়া হয়, তাহলেও সর্বমোট ২৭০ জুলের মতো শক্তি পাওয়া যাবে। এই শক্তি দিয়ে ছোট একটা বাল্বকে ৫ সেকেন্ডের জন্য জ্বালানো যাবে বড়জোড়। বিস্ফোরণ তো বহুদূর!
ইউরোপের সার্নে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৪০ হাজারের মতো প্রতিপ্রোটন তৈরি করা হয়। এই হিসাবে এক বছরে মোট উত্পাদিত প্রতিপ্রোটনের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০১৩টি। এটি ফার্মিল্যাবে উত্পাদিত প্রতিপ্রোটনের মাত্র ১ শতাংশ। তবে সার্নে প্রতিপ্রোটন বানানোর উদ্দেশ্য ভিন্ন। এই প্রতিপ্রোটনগুলো তুলনামূলক শীতল। পজিট্রনকে ফাঁদে ফেলে প্রতিহাইড্রোজেন পরমাণু বানানোই আসল উদ্দেশ্য। উত্পাদনের হার চাইলে ধীরে ধীরে দশ গুণ, হয়তো সর্বোচ্চ একশ গুণের মতো বাড়ানো সম্ভব। তারপরেও পুরো পৃথিবীর প্রতিপদার্থ উত্পাদনের পরিমাণ হবে ৩ ন্যানোগ্রাম। একসঙ্গে এর বেশি বানানো সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত এই দুই জায়গা মিলে, এত বছর ধরে মোট প্রতিপদার্থ বানিয়েছে মাত্র ১৫ গ্রাম। সব একসঙ্গে বানায়নি, সবটা একসঙ্গে জমাও নেই। হ্যাঁ, প্রতিপদার্থ জমা করাও বড় হ্যাপা। সে জন্যই এখনো বিস্ফোরক বানানো যায়নি।
প্রতিহাইড্রোজেনের কথা বলি। সার্নে যে পরিমাণ প্রতিপ্রোটন ও পজিট্রনকে একসঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে, তা দিয়ে সেকেন্ডে প্রতিহাইড্রোজেনের কয়েক শ পরমাণু বানানো সম্ভব। এরকম করে এক ন্যানোগ্রাম বানাতে লেগে যাবে হাজার বছর। এক গ্রাম বানানো দূরে থাক, ছোট খেলনা বেলুন ভরার মতো প্রতিহাইড্রোজেন বানাতে যে সময় লাগবে, তা আমাদের মহাবিশ্বের বয়সের চেয়েও বেশি। তার মানে, বাস্তবে অ্যান্টিম্যাটার দিয়ে হিরোশিমা বিস্ফোরণ ঘটানো কিংবা জ্বালানি হিসেবে রকেটে ব্যবহার এখনও বহুদূর কল্পনা। আর কিছু নয়।’