বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার: মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির দৌরাত্মে আতঙ্কে উখিয়া ও টেকনাফের জেলেরা। নাফ নদী ও সাগরে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছে। ৫টি নৌকাসহ ২৫ জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ৫ দিন পার হলেও এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি। অপহরণের শিকার জেলেদের পরিবারে কান্না ও বিষাদের ছায়া।
স্থানীয়রা বলছেন, উখিয়া ও টেকনাফের দুই উপজেলার লক্ষাধিক পরিবারের জীবন জীবিকা চলে নাফ নদীতে ও সাগরে মাছ শিকার করে। কিন্তু আরাকান আর্মির দৌরাত্মে দিশেহারা তারা। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের দিন। অপহরণের ভয়ে সাগরে যেতে চান না অনেকে।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি সাগর থেকে ৫টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ২৫ জন জেলে অপহৃত হয়েছেন। ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি বাংলাদেশ জলসীমানা থেকে তারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্রলার মালিক সমিতির অভিযোগ, এই অপহরণের সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা জড়িত।
টেকনাফ কায়ুকখালী বোট মালিক সমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি এলাকায় বাংলাদেশ জলসীমানায় মাছ শিকারের সময় হঠাৎ করে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি এপারে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৫টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ২৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। সেখানে আমার ট্রলারও রয়েছে। বার বার এ ধরনের ঘটনায় মাছ ব্যবসায়ীসহ জেলেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া এটি সমাধানে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী নুরুল কায়েছ বলেন, প্রায় সময় জেলেদের মিয়ানমারে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে আমরা খুব চিন্তিত। এটি সমাধান না হলে জেলেরা মাছ শিকারে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে।
টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, মাছ ধরার ট্রলার ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। সেগুলো টেকনাফ এবং শাহপরীরদ্বীপ ঘাটের। তাছাড়া সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া আমার এলাকার বেশ কয়েকটি নৌকাকে ধাওয়া করেছিল আরাকান আর্মি।
দুটি ট্রলারের মালিক নুরুল হাকিম জানান, তিনি এখনো জানেন না, কী ঘটেছে তার দুই ট্রলারের ১১ মাঝিমাল্লার ভাগ্যে ? অনেক সময় অপহৃতদের ফিরিয়ে দিলেও ট্রলার রেখে দেয় আরাকান আর্মি। এ জন্য ভয়ে সাগরে না পাঠিয়ে ট্রলারগুলো অলস বসিয়ে রাখছেন ট্রলার মালিকরা।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, জেলে ও ট্রলার ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।