
নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে ব্যাংক খাতের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশে ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংকের সম্মিলিত ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা—দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
গত ডিসেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতিতে ছিল ১৯টি ব্যাংক, ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। তবে তখন ২৮টি ব্যাংককে ডেফারেল সুবিধা দেওয়ায় ঘাটতির অঙ্ক কমে আসে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মোট ঘাটতির পরিমাণ কমলেও ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (১৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা)। জনতা ব্যাংক ডেফারেল সুবিধা নিয়ে ঘাটতি কমিয়েছে (৫২ হাজার ৮৯০ কোটি থেকে ১২ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা)। তবে অগ্রণী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি বেড়েছে। রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি কমলেও রাকাব ডেফারেল সুবিধা না পেয়ে ঘাটতিতে পড়েছে।
ইসলামি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি—১৭ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকও মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।
বেসরকারি খাতে আইএফআইসি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক ডেফারেল সুবিধা নিয়ে ঘাটতি কমাতে সক্ষম হয়েছে। তবে এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি বেড়েছে। নতুন করে ঘাটতিতে পড়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউসিবি, সিটিজেন ব্যাংক এবং একমাত্র বিদেশি ব্যাংক হাবিব ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) দাঁড়িয়েছে ৬.৭৪ শতাংশে, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম দরকার ১০ শতাংশ। ডেফারেল সুবিধা না থাকলে এই অনুপাত ঋণাত্মক হয়ে যেত (–১০.৯৭ শতাংশ)। একই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ডেফারেল সুবিধা সাময়িক স্বস্তি দিলেও স্থায়ী সমাধান নয়। রাজনৈতিক প্রভাব, অনিয়ম, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহির অভাবই সংকটের মূল কারণ। গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ২৩ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ব্যাংক খাতের গভীর সংকটের প্রতিফলন। সিআরএআর ঋণাত্মক হওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এখনই সুশাসন, স্বচ্ছতা ও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না করলে পুরো অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়বে।