
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: শাহজাদপুরের একটি ধানক্ষেত থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া কিশোর মিনহাজুল অবশেষে ফিরে এলেন মায়ের বুকে। ১৮ দিন ধরে হাসপাতালে পরিচয়হীনভাবে চিকিৎসাধীন থাকার পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচেষ্টায় তার পরিচয় মিলেছে। আর সেই সূত্র ধরেই দিনাজপুর থেকে ছুটে এসে ছেলেকে ফিরে পেলেন মা মনিরা বেগম। হাসপাতালের বেডে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “আমার মিনহা… একমাস পর তোকে পেলাম!”
১৬ বছরের মিনহাজুল দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের চৌকিয়াপাড়া গ্রামের মনিরা-খালেক দম্পতির সন্তান। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে বড়। তার ছোট বোন ইসরান (৮) ও ছোট ভাই রিফাত (২)। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন মিনহাজুল। এক মাস আগে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে ঢাকায় মামার বাসায় যান। সেখানে দুই দিন থাকার পর হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।
গত ১ মে সকাল ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের ভুলবাকুটিয়া গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ছেলেটিকে উদ্ধার করে শাহজাদপুর থানা পুলিশ। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরিচয় না মেলায় তাকে “অজ্ঞাত” রোগী হিসেবে রাখা হয়। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখেন শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আছলাম আলী। তিনি নিয়মিত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং পুলিশ সদস্য ডিএসবি তারাজুল ইসলামকে ছেলেটির দেখভালের দায়িত্ব দেন।
এরপর ছেলেটির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই ভিডিও দেখেই দিনাজপুরে থাকা মিনহাজুলের পরিবার তাকে চিনতে পারেন এবং পরদিন ভোরেই ছুটে আসেন সিরাজগঞ্জে।
আজ সকালে শাহজাদপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ছেলেটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ওসি মো. আছলাম আলী বলেন, “মিনহাজুলকে তার মায়ের হাতে তুলে দিতে পেরে মনে হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব আজ সার্থক হয়েছে। এটা আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।”
মিনহাজুলের মা মনিরা বেগম বলেন, “ছেলেকে হারিয়ে এক মাস ধরে পাগলের মতো খুঁজেছি। অনেক দোয়াপর, কান্না করেছি। আল্লাহর রহমতে, আপনাদের সবার কারণে আজ আমার ছেলে আমার বুকে ফিরে এসেছে।”