নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের অনুকূলে মুদ্রিত প্রায় ১৩ হাজার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে আছে। যাদের নামে এই কার্ডগুলো মুদ্রিত হয়েছে, তাদের ঠিকানা ভুল থাকায় তারা নিতে চাচ্ছেন না।
এসব ভোটারের উপজেলা হিসেবে তাদের বর্তমান উপজেলার নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তারা নিতে আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। পাঁচ বছরেও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।
নবসৃষ্ট লালমাই উপজেলা ইস্যুতে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত মাসে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় উত্থাপিত হলেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। কুমিল্লা নির্বাচন অফিস ও নির্বাচন ভবন, ঢাকার চিঠি চালাচালির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সিদ্ধান্তহীনতার কারণে লালমাই উপজেলার অনেক মানুষ স্মার্টকার্ড প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ইসির নথি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে এনআইডির ডিজি এ কে এম হুমায়ুন কবীর আমার দেশকে বলেন, কুমিল্লা সদর দক্ষিণের কয়েকটি ওয়ার্ড এবং লাকসাম উপজেলার একটি ইউনিয়ন নিয়ে লালমাই নামে নতুন একটি উপজেলা গঠিত হয়। মুদ্রিত প্রায় ১৩ হাজার স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম ঝুলে ছিল। আমরা সেগুলো তাদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশনা দিয়েছি।
ঠিকানা বদলের কারণে তারা এই কার্ডটি গ্রহণ করতে চাইছে না- এমন প্রশ্নে তিনি জানান, যদি কেউ গ্রহণ করতে না চায়, সেটি তার বিষয়। স্মার্টকার্ডগুলো অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে থাকতে পারে না। কেউ প্রয়োজন মনে করলে ফি জমা দিয়ে নতুন স্মার্টকার্ড নিতে পারেন।
আর কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (আরইও) দুলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর অবিতরণকৃত ১২ হাজার ৮৮২টি স্মার্টকার্ডের সুষ্ঠু সমাধানের জন্য ইসির অভিপ্রায় অনুযায়ী দুটি চিঠি দিয়েছি। এখনো সিদ্ধান্ত জানতে পারেনি। মূল সমস্যা, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রগুলো মুদ্রণের পর কয়েকটি এলাকা নিয়ে নতুন উপজেলা লালমাই গঠিত হয়। কার্ডে পুরোনো উপজেলা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ নাম উল্লেখ থাকায় সংশ্লিষ্টরা স্মার্টকার্ড গ্রহণ করতে চাইছে না। এখন কমিশন থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে তা প্রতিপালন করার চেষ্টা করা হবে।
নথির তথ্যে দেখা যায়, গত ১৫ এপ্রিল সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনে মাসিক সমন্বয় সভায় অব্যবহৃত স্মার্টকার্ড ইস্যুটি স্থান পায়। সেখানে বলা হয়, কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার প্রায় ১৩ হাজার স্মার্টকার্ডের ঠিকানা অংশে সদর দক্ষিণ উপজেলার নাম প্রিন্ট হওয়ায় কার্ডসমূহ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
২০২২ সালের ২৯ মের নথিতে বলা হয়, ২০১৮ সালে লালমাই উপজেলা নামে কুমিল্লা জেলায় নতুন এক উপজেলা গঠিত হয়। এতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে ৯টি এবং লাকসাম থেকে একটি ইউনিয়ন সংযুক্ত করা হয়।
লালমাই উপজেলার সৃজিত হওয়ার আগের ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে শুধু ভোটার এলাকা অংশের ঠিকানা (উপজেলা) লালমাই হয়েছে। কিন্তু বাকি ঠিকানা অপরিবর্তিত রয়েছে, অর্থাৎ লালমাইয়ের স্থলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এবং লাকসাম উল্লেখ আছে। লালমাই উপজেলা গঠিত হওয়ায় যেসব ভোটারের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা লালমাই সেসব ভোটারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা লালমাই হওয়ার কথা।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থেকে প্রাপ্ত ১২ হাজার ৮৮২টি স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি তারিখে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা থেকে উপজেলা নির্বাচন অফিস, লালমাইয়ে প্রেরণ করা হলেও সব কার্ডের ঠিকানার উপজেলা অংশে লালমাইয়ের স্থলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থাকায় তা বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের সময় লালমাই উপজেলার শুধু ১২ হাাজার ৮৮২টি কার্ড এসেছে এবং কার্ডগুলোর অত্র কার্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে।
এতে বলা হয়, ভোটারের দুর্ভোগের বিষয়টি আশু সমাধানের নিমিত্তে ২০১৯ সালের হালনাগাদকৃত ভোটার ব্যতীত বিদ্যমান সব ভোটারের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান এবং ১২ হাজার ৮৮২টি কার্ড ফেরত নিয়ে এর ঠিকানা সংশোধন করে পুনর্মুদ্রণ করে ওই সমস্যার জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা প্রয়োজন। এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন মোহাম্মদ মুঞ্জুরুল আলম, সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার, কুমিল্লা।
এ ছাড়া একই ইস্যুতে আরো দুটি চিঠি দেওয়া হয় কুমিল্লা থেকে। তবে এখনো বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।