
ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে এর আগে দুই বার হত্যা চেষ্টা করা হয়। তৃতীয়বারের চেষ্টায় সফল হয় খুনিরা। খুনের আগে আনোয়ারুলকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ডেকে নেওয়া হয় কলকাতার ওই ফ্ল্যাটে। সেখানে তাঁর ওপর চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
খুনের ঘটনায় আট দিনের রিমান্ডে থাকা তিন আসামিকে লাশ গুমসহ নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। তবে শনিবার (২৫ মে) রাত পর্যন্ত লাশের কোনো অংশ উদ্ধার হয়নি। মরদেহের কোনো অংশ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
অপর দিকে কলকাতায় সিআইডির হেফাজতে থাকা জিহাদ হাওলাদারের দেওয়া তথ্যে শুক্রবার জিরানগাছা বাগজোলা খালে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি করা হয়। তবে লাশের কোনো চিহ্নও পাওয়া না যাওয়ায় শনিবার জাল ফেলে আবার তল্লাশি করা হয়।
ঘটনা তদন্তে ঢাকায় আসা ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) চার সদস্য গতকালও মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এদিকে ঢাকা থেকে ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল ঘটনা তদন্তে কলকাতায় যাচ্ছে। লাশ উদ্ধার এবং বাংলাদেশে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য নিয়ে সেখানকার পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান এই দলে নেই বলে জানা গেছে।
আট দিনের রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ডিবি জানতে পেরেছে, আনোয়ারুলকে মিথ্যা কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছার আগেই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ভারত ছেড়ে পালিয়ে যান। যাওয়ার আগে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন তিনি। খুনিদের প্রাথমিক চিন্তা ছিল, দুদিন ফ্ল্যাটে আটকে রেখে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে ভারতে থাকা আনোয়ারুলের বন্ধু বা দেশে পরিবারের কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করা।
ডিবির দাবি, খুনের আগে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম প্রয়োগ করে আনোয়ারুলের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ছবিও তোলা হয়। চেতনানাশক প্রয়োগের পর জ্ঞান না ফেরায় খুনিরা টাকা আদায়ের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তাঁকে হত্যা করে। এরপর লাশ টুকরা টুকরা করে দূরে কোথাও ফেলে দেওয়া হয়। পরে সবাইকে বিভ্রান্ত করতে সংসদ সদস্যের ব্যবহার করা চারটি মুঠোফোন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকে খুনিরা। যাতে মুঠোফোনের অবস্থান দেখে খুনের ঘটনাস্থল চিহ্নিত করা না যায়।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে দর্শনা সীমান্ত হয়ে কলকাতায় যান। পরদিন (১৩ মে) কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে তিনি খুন হন। ২২ মে তাঁর খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুই দেশের পুলিশ। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি খুনের পর নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান বলে পুলিশ বলছে। আরেক অভিযুক্ত সিয়ামের অবস্থানও নেপালে। তাদের ধরতে দুই দেশের পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে শনিবার এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গণমাধ্যমকে বলেন, হত্যার পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। তাহলে হয়তো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।’