নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেনি দেশের পুলিশ বাহিনী। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আন্দোলন দমনে পুলিশের গুলিতে প্রাণহানি ঘটে নারী-শিশুসহ দেড় হাজারের বেশি মানুষের, আহত হন প্রায় ৩০ হাজার। এরপর শুরু হয় গণরোষ ও প্রতিশোধের আশঙ্কা। আইজিপি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত বহু সদস্য আত্মগোপনে চলে যান, কেউ কেউ দেশও ছাড়েন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশের আচরণ ছিল ইতিহাসে নজিরবিহীন। ওই সময় অনেকেই ইউনিফর্ম খুলে ফেলে রাখেন থানায়, কেউ নিখোঁজ হয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ থানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে ধীরে ধীরে পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে ফিরলেও তাদের অনেকেই এখনও মানসিকভাবে ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এখনও ‘মব জাস্টিস’-এর ভয় ও সামাজিক প্রতিশোধের আতঙ্ক কাজ করছে বলে জানা গেছে।
সংস্কারের পথে বাহিনী
আন্দোলনের পরপরই জনগণের আস্থাহীনতা কাটাতে সরকার গঠন করে পুলিশ সংস্কার কমিশন। যদিও বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কার নিয়ে উদ্যোগ নতুন নয়—১৭৯২ সাল থেকে শুরু করে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বহুবার গঠিত হয়েছে কমিশন ও কমিটি। ২০২৪ সালের ভয়াবহ ঘটনার পর এই সংস্কার প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয়।
কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী এএসএম নাসির উদ্দিন এলান বলেন, “৫ আগস্টের পর পুলিশকে শূন্য থেকে পুনর্গঠনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এখন অনেকটাই গুছিয়ে উঠেছে, নেতৃত্বেও দক্ষতা এসেছে।”
পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় দায়িত্ব ফেলে যাওয়া ১৮৭ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে শতাধিক এখনও কাজে ফেরেননি। এর মধ্যে ৫১ জন অবসরে গেছেন, ১৭ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ওই সময় গণহত্যার অভিযোগে ১১৬৮ জন সদস্যকে আসামি করা হয়, যাদের অনেকে এখনও পলাতক।
মনোবল ফিরে আসার চেষ্টা
পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, “৫ আগস্টের পর আমরা কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলাম। তবে সবার আন্তরিকতায় এখন পুলিশের মনোবল অনেকটাই ফিরেছে। বর্তমানে সব পর্যায়ের সদস্যরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “বর্তমান পুলিশ বাহিনী আগের চেয়ে অনেক বেশি মানবিক। হয়তো এ কারণেই অনেকে মনে করেন, তারা শতভাগ সক্রিয় নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো—তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করছে।”
১১ মাস পেরিয়ে গেলেও ২০২৪ সালের আগস্টের ট্রাজেডি পুলিশ বাহিনীর মধ্যে রেখে গেছে গভীর দাগ। এই মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা কাটিয়ে পুলিশকে মানবিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলাই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.