
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা ২০১৬ সালের গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২২ জন মানুষ নির্মমভাবে নিহত হন। এই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ পর্যালোচনার পর হাইকোর্ট সাত জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই রায় পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন আদালত।
ঘটনার পটভূমি
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের অভিজাত রেস্টুরেন্ট হোলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জন সাধারণ নাগরিক এবং ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির পাঁচ সদস্য। পরে যৌথ কমান্ডো অভিযানে ওই পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
পরবর্তীতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আটজনকে আসামি করে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দেন।
যাঁদের সাজা কমেছে
হাইকোর্টের রায়ে সাজা কমানো সাত আসামি হলেন—
জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী,
আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ,
হাদিসুর রহমান সাগর,
রাকিবুল হাসান রিগ্যান,
আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ,
শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ,
ও মামুনুর রশিদ রিপন।
প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ
সম্প্রতি প্রকাশিত হাইকোর্টের ২২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে-
হামলার সময় অভিযুক্ত সাতজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না এবং সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেননি।
মূল হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছেন পাঁচ আত্মঘাতী জঙ্গি, যারা ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
আসামিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থের জোগান, পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ প্রমাণিত হলেও, হত্যাকাণ্ডের সরাসরি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।
বিচারিক আদালত “একই অভিপ্রায়ের” ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দিলেও হাইকোর্ট সেটিকে যথোপযুক্ত বিবেচনা করেননি।
আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(আ) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলেও, ৬(২)(অ) ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার উপযুক্ত কারণ পাওয়া যায়নি বলেই রায়টি সংশোধনযোগ্য বিবেচনা করে হাইকোর্ট।
আপিল বিভাগের অগ্রগতি
রায় ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ পক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনও অগ্রগতি জানাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।