অনলাইন ডেস্ক: মাত্র এক মাসের বর্ষায় হিমাচল প্রদেশে ১৯টি মেঘফাটা বৃষ্টি ও ২৩টি চকিত বন্যার ঘটনায় ৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরেই মেঘফাটা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে রাজ্যটি বারবার বিপর্যস্ত হচ্ছে। ২০২৫ সালের শুরুতেই এমন প্রাণহানিতে বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষ সবাই উদ্বিগ্ন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে হিমাচলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা যান ৪০৮ জন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় এক হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, মারা যায় সাত হাজার গবাদি পশু। তার আগের বছর, ২০২৩ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৪২৮ জনের, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮,৬৭৯ কোটি টাকা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল কুলু, মানালি ও সিমলা। ধসে বিধ্বস্ত হয় বহু ভবন ও রাস্তা।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে মেঘফাটা বৃষ্টি হয়েছিল ৭ বার, হয়েছিল ৩০টিরও বেশি চকিত বন্যা—মৃত্যু হয়েছিল ১২৫ জনের। ২০২১ সালে মৃত্যু হয়েছিল ৪৭৬ জনের। রাজধানী সিমলায় ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বৃষ্টি ও ধসে মারা গেছেন ৯১ জন, যার মধ্যে শুধু ২০২৪ সালেই মারা যান ৪০ জন।
আইআইটি রোপারের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, হিমাচলের ৪৫ শতাংশ এলাকা ধসপ্রবণ। ১৭ হাজারের বেশি স্থানে ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে, যার ৬৭৫টি ঘনবসতিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এলাকায়।
পাহাড়ে অবৈজ্ঞানিকভাবে নির্মিত সাত-আটতলা ভবন, বন উজাড়, রাস্তা ও সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্প—সবই পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবেশবিদ মল্লিকা জালান বলেন, “আগে যেটা একমাসে বৃষ্টি হতো, এখন কয়েকদিনেই সেই বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বিপর্যয় তীব্রতর হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমরা প্রতিদিন দেখছি, কিন্তু সচেতন হচ্ছি না।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু রাজনীতিক নয়, জনগণকেও দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় অংশীদারিত্ব ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়।”
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা মন্তব্য করেন, “দেশে কেউ পরিবেশগত দায় নেয় না। সরকার ও রাজনীতিকদেরকেই কেবল দোষারোপ করা হয়। অথচ সচেতনতা ও কঠোর নজরদারি ছাড়া কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
তিনি উল্লেখ করেন, “নির্বাচনে কখনো পরিবেশ ইস্যু হয় না। দিল্লির দূষণের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে বাজি পোড়ানো, খড় পোড়ানো—সবই বছরের পর বছর চলছেই।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত পর্যটন ও অবকাঠামো নির্মাণ হিমালয় অঞ্চলকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সিমলা শহরের আজকের দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হতে হয়—চোখে পড়ার মতো কোনো ফাঁকা জায়গা নেই, শুধু দালান।
মল্লিকা বলেন, “হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপূর্ব—সব অঞ্চলের জন্য একই শিক্ষা প্রযোজ্য। পরিবেশবিধ্বংসী অভ্যাস ও উদাসীনতা বন্ধ না হলে, পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে।”
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.