
বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদের খোঁজে ১১টি তদন্ত কমিটি; জব্দ হয়েছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব
স্টাফ রিপোর্টার: ক্ষমতা হারানো সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নজিরবিহীন ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থপাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তদন্তে জানা গেছে, শেখ হাসিনার পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও দেশের শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর নামে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে।
গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সেখানে বলা হয়, অর্থপাচার ও ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে গঠিত ১১টি তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৪২ হাজার কোটি টাকার বিদেশি সম্পদ জব্দ করেছে।
তদন্তে যাদের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে আছেন—সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো, এস আলম, সিকদার, বসুন্ধরা, ওরিয়ন, নাসা, নাবিল, জেমকন ও সামিট গ্রুপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নেতৃত্বে এই অনুসন্ধান চলছে। তদন্তে দেখা গেছে, কিছু গ্রুপের নামে-বেনামে একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
বিশেষ নজরকাড়া কিছু তথ্য:
এস আলম গ্রুপ: ২.২৫ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়ার অভিযোগ
বেক্সিমকো: ৫৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ, ২০ হাজার কোটি খেলাপি
সিকদার গ্রুপ: ১০ হাজার কোটি ঋণ, এর মধ্যে ৭৮০০ কোটি খেলাপি
বসুন্ধরা গ্রুপ: ৩৫ হাজার কোটি ঋণ, ৭৮০০ কোটি খেলাপি
নাসা, ওরিয়ন, নাবিল, জেমকন ও সামিট—সবগুলোর বিরুদ্ধেই কোটি কোটি টাকার ঋণ ও বিদেশে সম্পদ থাকার প্রমাণ মিলেছে
আদালতের নির্দেশে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ একাধিক দেশে সম্পদ জব্দ ও হিসাব ফ্রিজ করার প্রক্রিয়া চলছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যদের মতে, এই অর্থপাচার ও লুটপাট দেশের ব্যাংকিং খাতকে গভীর সংকটে ফেলেছে। তারা দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে।