বিশেষ প্রতিনিধি: খুনের মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। গত বুধবার রাত ৩টায় কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে ভিআইপি গেট দিয়ে তিনি থাই এয়ারওয়েজে বাংকক গেছেন। সেখান থেকে তিনি দিল্লি যাবেন বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন শেষে কোনো বাধা ছাড়াই তিনি কী করে দেশত্যাগ করলেন এবং তাকে এ কাজে কারা সহযোগিতা ও সুযোগ করে দিয়েছেÑ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ সবার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হলেও আবদুল হামিদ কোন এখতিয়ারে সেই পাসপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ পেলেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অন্ধকারে রেখে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে বিদেশে যেতে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান এ ব্যাপারে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি পুলিশের আইজি কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে কিছুই জানাননি। এমনকি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) থেকে আবদুল হামিদকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও সংস্থাটির মহাপরিচালককে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। একটি সূত্রে জানা গেছে, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই) বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল এবং তাদের পক্ষ থেকেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ বা পালানোর ঘটনায় সরকারের ভয়াবহ গোয়েন্দা ব্যর্থতা ধরা পড়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানত এসবির ব্যর্থতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। কারণ বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে সবকিছু সমন্বয় করে পুলিশের বিশেষ শাখা বা এসবি। ইমিগ্রেশন সম্পূর্ণরূপে এসবির অধীনে। এসবিপ্রধান নিজে জানা সত্ত্বেও বিষয়টি কেন আইজিপি কিংবা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাতে জানাননি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাটির পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আবদুল হামিদ বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থাই এয়ারওয়েজের ব্যাংককগামী একটি ফ্লাইটে যাত্রা করেন। তার পরিবার থেকে বলা হয়েছে, তিনি চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক গেছেন। বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট দিয়েই আবদুল হামিদ ফ্লাইটে ওঠেন। ভিআইপি গেট ব্যবহার করার বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অগোচরে হওয়ার সুযোগ নেই। ভিআইপি গেট ও লাউঞ্জ ব্যবহারকারীদের ওপর বিমানবন্দরে কর্তব্যরত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বাড়তি নজরদারি থাকে। কোনো একটি সংস্থার আপত্তি থাকলেও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বাধাহীনভাবে কারো দেশত্যাগের সুযোগ থাকে না।
দেশত্যাগের আগে আবদুল হামিদ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে তার এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। সেখান থেকে তিনি বিমানবন্দরে যান। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি নিজের নিকুঞ্জের বাসভবন থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। বুধবার রাতে তার সঙ্গে ছোট ছেলে রিয়াদ আহমদ এবং শ্যালক ডাক্তার আ ন ম নৌশাদ খানও ব্যাংকক যান। আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার নির্বাচনী আসন থেকে ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০১৩ সালের ওই নির্বাচনে নানা কারচুপির অভিযোগ ছিল। পরবর্তী তিনটি নির্বাচনেও তৌফিক আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে অভিযোগ রয়েছে আবদুল হামিদের নাম ভাঙিয়ে শ্যালক জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক চিকিৎসক আ ন ম নৌশাদ খান নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যার ভাগও হামিদ পরিবারে যেত বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ভাতের হোটেল খ্যাত শেখ হাসিনার সময়কালের আলোচিত ডিবি প্রধান হারুনের সঙ্গেও আবদুল হামিদের বিশেষ সখ্য ছিল।
উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আরেক শ্যালক জিহাদ খান জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী তাকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময়ে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থানায় দায়ের করা একটি মামলার আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময়কালে দু’বারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। গত ১৪ জানুয়ারি মামলাটি দায়ের হয়। মামলায় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদসহ ১২৪ জনকে আসামি করা হয়।
এরকম একটি খুনের মামলার আসামি হয়েও আবদুল হামিদ কীভাবে বিমানবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন করে বিদেশে গেলেন তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররাও এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমের কোনো কোনো প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে জড়িয়েও বক্তব্য এসেছে। শুক্রবার ড. আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ওই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি বলেন, ‘খুনের মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর। এটা কোনোভাবেই আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিম্নআদালতের বিচারকরা আছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আদালতের বিচারকের দায়িত্ব বিমানবন্দর পাহারা দেওয়া বা কারো চলাচলে বাধা দেওয়া নয়।
বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে দিনাজপুরে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেখানে আবদুল হামিদের দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভ ও ঘেরাওয়ের মুখে তিনি ছাত্রদের বলেন, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। তাদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে তিনি পদত্যাগ করে চলে যাবেন।
এনএসআইয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল মো. হোসাইন আল মোরশেদ সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কীভাবে এনএসআই থেকে বিদেশে যাওয়ার ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স) পেলেন এবং দেশত্যাগ করতে পারলেন, তা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। সূত্রটি জানায়, অন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর পান। কিন্তু এনএসআইয়ের অধীন কর্মকর্তারা তাদের সংস্থাপ্রধানকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। এক্ষেত্রে এনএসএসআই প্রধানের অজ্ঞাতসারে আবদুল হামিদকে বিদেশ যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
আবদুল হামিদের বিদেশ যাওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রাথমিকভাবে কিশোরগঞ্জের এসপি ও ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
থাইল্যান্ড থেকে দিল্লি যাবেন আব্দুল হামিদ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট টিজি ৩২১-এ ৭ জুন ২০২৫ তারিখে ঢাকায় ফেরার জন্য বুকিং করেছেন। তবে একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি এর মধ্যে দিল্লি সফর করবেন বলে জানা গেছে। আবদুল হামিদ কূটনৈতিক পাসপোর্টে ভ্রমণ করছেন। এ কারণে ভিসা ছাড়াই ভারতে প্রবেশ ও সেখানে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন অবস্থান করার অধিকার রাখেন তিনি।
সূত্রের দাবি, এই সফরটি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পনা করে করা হয়েছে, যাতে তার প্রস্তাবিত দিল্লি সফরটি গোপন রাখা যায় এবং পুরো সময়টাই তিনি ব্যাংককে ছিলেন এমনটা মনে হয়।
এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের ছাড়পত্র যেভাবে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তব্যরত এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অতিরিক্ত পরিচালক আমিনুজ্জামান পলাশের সঙ্গে অফিশিয়াল মোবাইল ফোনে (০১৮৪৭০৯৯৮৯৪) যোগাযোগ করেন, যিনি পরে এনএসআইয়ের এক্সটার্নাল ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজহারের সঙ্গে অফিশিয়াল মোবাইলে (০১৩১৩৩৭৭৬০০) যোগাযোগ করেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রস্থানের জন্য ছাড়পত্র চান। এনএসআইয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর সংস্থাটির সহকারী পরিচালক ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে কোনো আপত্তি জানাননি।
ডিজিএফআইয়ের জেনারেল স্টাফ অফিসার (জিএসও-২) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তার বস জেনারেল স্টাফ অফিসারের (জিএসও-১) সঙ্গে অফিশিয়াল মোবাইলে (০১৭৩০৫০১২২৪) যোগাযোগ করেন এবং ডিজিএফআইয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অফিশিয়াল মোবাইল ফোনে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ডিজিএফআইয়ের তরফ থেকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে কোনো আপত্তি জানানো হয়নি।
এসবির সদর দপ্তরে পাঠানো নোট
জানা গেছে, ভিআইপিদের বিদেশ গমনের বিষয়গুলোর নোট পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির সদর দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়। আবদুল হামিদের বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রেও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। আবদুল হামিদের বিদেশ গমন নিয়ে তৈরি নোটে বলা হয়েছেÑ টিজি-৩৪০ বিমানযোগে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যাংককগামী যাত্রী মো. আবদুল হামিদ ভিআইপি টার্মিনালে এলে টার্মিনাল ইনচার্জ ওসি ইমিগ্রেশন আলফা ১১-কে অবগত করেন। আলফা-১১ এনএসআই ও ডিজিএফআইকে অবগত করেন। এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক সানাউল্লাহ নূরী ও ডিজিএফআইয়ের জিএসও-১ উইং কমান্ডার ফয়সাল অনাপত্তি প্রদান করেন। এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের প্রাপ্ত অনাপত্তি ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ এস এস ইমিগ্রেশন (অপারেশন), অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইমিগ্রেশন ও ডিআইজি ইমিগ্রেশনকে অবগত করেন। অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইমিগ্রেশন এসবি চিফের রেফারেন্সে ওসি ইমিগ্রেশন আলফা ১১-কে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করেন। ওসি ইমিগ্রেশন আলফা ১১ এসবির ওপরে উল্লিখিত সিনিয়র স্যারের নির্দেশে ও এনএসআই এবং ডিজিএফআই থেকে প্রাপ্ত অনাপত্তি সাপেক্ষে এবং ইমিগ্রেশন ফরট্র্যাক সিস্টেমে কোনো মন্তব্য না থাকায় ভিআইপি টার্মিনালে কর্তব্যরত ইনচার্জকে ইমিগ্রেশন করার নির্দেশ প্রদান করেন। টার্মিনাল ইনচার্জ ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য, যাত্রীর সঙ্গে তার পুত্র রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডাক্তার আ স ম নৌশাদ খানও গমন করেন।
যে পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স হয়
এদিকে এসবি সূত্রে জানা গেছে, কোনো যাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা থাকলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (প্রয়োজন মনে করলে তার সুপিরিয়র কমান্ডের মাধ্যমে) সরাসরি এসবির ইমিগ্রেশন বিভাগের কাছে চিঠি লিখবেন। চিঠিতে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ওই ব্যক্তির দেশত্যাগ ঠেকাতে দেশের সব ইমিগ্রেশনে যথাযথ নিয়মে এন্ট্রি করার জন্য অনুরোধ করবেন তদন্ত কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি এসবির কাছে চিঠি লিখবেন। আবদুল হামিদের ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জের এসপি এক্ষেত্রে এসবিকে চিঠি লিখতে পারতেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
এসবির কাছে চিঠি না লিখলেও সাধারণত সরকারের চাহিদা মোতাবেক বিশেষ ব্যক্তিদের নাম ব্ল্যাক লিস্টেড তালিকায় থাক বা না থাক তারা বিমানবন্দরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এসবি, সিটি এসবি, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ কর্তৃপক্ষকে চেইন অবলম্বন করে অবহিত করে।,
জানা গেছে, এসবি ইমিগ্রেশন বিভাগের ক্ষেত্রে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ওসি ইমিগ্রেশন বিষয়টি এসএস ইমিগ্রেশনকে জানান। বিষয়টি অ্যাডিশনাল আইজি (এসবিপ্রধান) হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পলিটিক্যাল শাখার দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিবকে জানানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী যুগ্ম সচিব স্বরাষ্ট্র সচিবকে জানান। স্বরাষ্ট্র সচিব হয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাকে জানানো বাধ্যতামূলক। মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স না পেলে আবদুল হামিদের মতো অতিপরিচিত, সাবেক রাষ্ট্রপতি ইমিগ্রেশন পার হতে পারেন না।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, বুধবার রাতে আবদুল হামিদ এয়ারপোর্টে যাওয়ার বিষয়টি জানার পর এয়ারপোর্ট এসবি ইমিগ্রেশন থেকে যথাযথ চ্যানেলে এসবি প্রধান গোলাম রসুলকে জানানো হয়। তারপর আর কোনো বিষয় দায়িত্বপ্রাপ্ত এসবি কর্মকর্তারা জানেন না। যা জানার কথাও নয়। সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত আবদুল হামিদকে থাইল্যান্ডে যেতে কোনো ধরনের বাধা দেওয়ার কোনো নির্দেশনা পাননি এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
এদিকে তদন্ত কমিটির বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামূল সাগর আমার দেশকে বলেন, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে প্রশ্ন করা হলে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।
জড়িতদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে: অন্তর্বর্তী সরকার
এদিকে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়ে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভের বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।’