
জেমস আব্দুর রহিম রানা: হস্তান্তরের এখনো ৪-৫ মাস বাকি। অথচ এখনই খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেওয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। এমন চিত্র প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার নতুন থানা ভবনের। ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যশোর গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে দুই ধাপে বেনাপোল পোর্ট থানা ভবন নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে চার কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম দুই তলার কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিটন ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১৯ সালে। দ্বিতীয় ধাপে চার কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলার নির্মাণকাজ পায় একই মালিক জাহাঙ্গীর আলমের জেএস কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে ২০২১ সালে। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুনে। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনটির বেজমেন্টসহ দেওয়ালের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জানালেও তারা এখন পর্যন্ত মেরামত করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বেনাপোলের ছোটআঁচড়া হাইরোডের পাশে প্রায় তিন বছর ধরে ভবনটি নির্মিত হচ্ছে। তবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনটিতে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ায় এলাকায় কানাঘুষা চলছে। অনেকে বলছেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নির্ধারিত ব্যয়ের অর্ধেকও খরচ করেননি। পর্যাপ্ত পরিমাণ সিমেন্ট ও ভালোমানের বালু দেওয়া হয়নি। যে কারণে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল ও পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে।’
রাসেল হোসেন নামের আরেকজন বলেন, ‘চারতলা থানা ভবনটি আমাদের চোখের সামনেই নির্মিত হয়েছে। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই দেওয়ালের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এমনকী বেজমেন্টের বিভিন্ন স্থানে ফাটলও দেখা গেছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল স্থলবন্দরের একটি পরিত্যক্ত ভবনে পোর্ট থানার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। বর্তমানে থানা ভবনও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। মাসখানেক আগে নতুন থানায় উঠে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। থানায় উঠে দেখি দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এমনকি ভবনের বেশ কয়েক জায়গায় ফাটলও ধরেছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহাঙ্গীরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো কথারই গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিটন ট্রেডার্সের মালিক জাহাঙ্গীর আলম থানা ভবন নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা কাজ ঠিকঠাক করেছি। এখন যদি নষ্ট হয়, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই। এ বিষয়ে আর কিছু বলারও নেই। আপনার কিছু বলার থাকলে অথবা নষ্টের কারণ জানতে হলে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তিনিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’
যশোর গণপূর্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনটি হস্তান্তরের বাকি ৪-৫ মাস। এখনো এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। এমনকি ভবনটির দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়া ও ফাটলের বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। এ বিষয়ে যথাযথ খোঁজখবর নেওয়া হবে। এ ধরনের সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’