
নিজস্ব প্রতিবেদক: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ হরমুজ প্রণালিতে, যা দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেল পরিবাহিত হয়। ইরানের হুমকির পর এ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার জেরে বিপাকে পড়তে পারে আমদানিনির্ভর দেশগুলো। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
বাংলাদেশ কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করে, যার সিংহভাগই আসে হরমুজ প্রণালি দিয়ে। চলতি অর্থবছরে কাতার থেকে ৪০টি কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনার মধ্যে ৩৪টি ইতোমধ্যে এসেছে। তবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে এ আমদানিতে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ এলএনজি এবং ২১ শতাংশ অপরিশোধিত তেল পরিবাহিত হয় এই রুটে। দক্ষিণ এশিয়ার বড় একটি অংশ—যেমন বাংলাদেশ, ভারত, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া—এই রুটের ওপর নির্ভরশীল।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হলে দেশের শিল্প, বিদ্যুৎ ও আবাসিক গ্যাস খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ কমবে এবং রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত এসেছে ২৬৭টি কার্গো। দ্বিতীয় দফার নতুন চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছর থেকে আরও বেশি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি যদি দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ থাকে, তাহলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিও তার আঁচ এড়াতে পারবে না।