
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আধুনিক ভবন ও সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা ও পরিবেশগত নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন সেবাপ্রার্থীরা।
গত ১১ আগস্ট সকালে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা বর্জ্যের ডাস্টবিনের পাশেই জ্বরে আক্রান্ত এক রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। স্বজন শহিদুল ইসলাম জানান, শয্যা খালি না থাকায় বাধ্য হয়ে বারান্দায় চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।
রোগীদের অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসক পাওয়া যায় না। বসার ব্যবস্থা নেই, নষ্ট ফ্যানের কারণে গরমে অতিষ্ঠ হতে হয়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তেলাপোকা হাঁটাহাঁটি করে। অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের বদলে উপসহকারী মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) ওষুধ লিখে দেন।
রানীগ্রামের মোনোয়ারা খাতুন বলেন, “আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি, চিকিৎসক আসছেন না। প্রচণ্ড গরম, বসার জায়গাও নেই।” ভদ্রঘাট ইউনিয়নের হাসান আলী অভিযোগ করেন, “ডাক্তার আসেন দেরিতে, আর সহকারী টাকা নিয়ে সিরিয়াল ভেঙে রোগী ঢুকান।”
শুধু চিকিৎসা নয়, ভ্যাকসিন সংকটও ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। শিয়ালকোল ইউনিয়নের রাশিদুল ইসলাম বলেন, বিড়াল কামড়ানোর পর জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিতে এসে জানতে পারেন, মজুত নেই। ফলে বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য হন।
ওষুধ সংকট, অপরিচ্ছন্নতা ও শয্যা সংকটের কথাও উল্লেখ করে রোগীর স্বজন রুহুল আমিন বলেন, “এক বেডে দুজন রোগী থাকতে হয়। ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। চারপাশে আবর্জনার গন্ধে ভোগান্তির শেষ নেই।”
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শিমুল তালুকদার বলেন, “২৫০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৩০০-র বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। ৫৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর জায়গায় কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন। এত বড় হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা কঠিন।” তবে তিনি দাবি করেন, চিকিৎসকরা এখন সকাল-বিকেল দুই বেলা রাউন্ড দেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকিকুন নাহার বলেন, “কম জনবল দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও পরিবেশ উন্নয়নে আমাদের চেষ্টা চলছে। অনিয়মের প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”