
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব। সরকারি খাস জমি মালিকানায় রূপান্তর, খারিজ ও নামজারীর নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ফাইল আটকে ঘুষ আদায়—সবকিছুই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সদ্য বদলীকৃত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) হাছান আলী, যিনি সম্প্রতি শিয়ালকোল থেকে বদলি হয়ে নাটুয়ারপাড়া ভূমি অফিসে যোগ দিয়েছেন। সেবাগ্রহীতাদের কাজ না হওয়ায় হাসান আলীর নিটক পরিশোধিত টাকার জন্য প্রতিদিন অফিসে এসে তাঁর খোজ নিচ্ছেন এবং টাকা আদায়ের জন্য দুশ্চিন্তায় কপালের ভাজ এখন ভুক্তভোগীদের চোখে মুখে।
অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মচারী, সেবাগ্রহীতা ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ—হাসান আলীর সময় ভূমি অফিস যেন দুর্নীতির রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। তার বদলির পরও এখনো এলাকাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিলধলী গ্রামের আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, দুইটি খারিজের জন্য ১৬ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু অবৈধ প্রক্রিয়ায় আবেদন করায় তা বাতিল হয়ে গেছে। পরে টাকাটা ফেরত নিতে গেলে নানান টালবাহানা করছে। ফোন দিলেই বলে ব্যস্ত আছি, পরে ফোন দিব।
শিয়ালকোল গ্রামের জীতেন্দ্রনাথ বলেন, শুধুমাত্র একটি চেকের অনুমোদন নিতেই দালালের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। আর প্রতিটি খারিজের জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। অফিসের ভেতর টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয়নি।
বিলধলীর শফিকুল ইসলাম জানান, নায়েব হাসান আলী খারিজের জন্য ৫ হাজার টাকা চেয়েছিল, আমি তিন হাজার দিয়েছিলাম। কিন্তু তার ব্যক্তিগত নাম্বার দিয়ে আবেদন করায় হাজিরার সময় জানতে না পারায় আবেদন বাতিল হয়ে যায়। পরে নিজে ঘুরে কাজটা শেষ করেছি, কিন্তু টাকা ফেরত দেয়নি।
শিলন্দা গ্রামের পটলের ছেলে রুবেল জানান, দেড় শতক জমি দলিলমূলে কিনে ৫ হাজার টাকা দিয়ে নামজারী করেছি। কিন্তু দাগ ও সাইট না মেলায় জমিতে এখনো যাওয়া যাচ্ছে না। খারিজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা টেকেনি।
আরেক ভুক্তভোগী রাশিদুল গং অভিযোগ করেন, শিলন্দা মৌজার ২৬ একর জমির মধ্যে সোয়া ৬ শতক জমির প্রকৃত মালিক । অথচ নিয়ম ভেঙে দলিল নম্বর ও হিস্যার অংশ দাখিল না করেই সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে
দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে সেটি নামজারী করে দেন নায়েব হাসান আলী। এটা একেবারে বেআইনি কাজ।
রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল আলীম জানান, ভূমি অফিসে একটি খতিয়ানের অংশ নামজারীর জন্য হাসান আলী সাড়ে তিন লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা বেশি হওয়ায় আমি কাজটা করিনি। এখন রেকর্ডের অপেক্ষায় আছি।
সদর উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসান আলী এখন কানুনগো পদে তদবির চালাচ্ছেন। যদি সেই পদ পান, তাহলে তার অনিয়ম আরও বাড়বে। কারণ তিনি জেলার নায়েবদের সংগঠনের সভাপতি—তার পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব।
অফিসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হাসান আলী তার সময়ে নামজারীর ফাইলগুলো বিশেষ চিহ্নে ভাগ করতেন— যে ফাইলে টাকা আসত, সেটিই আগে পাঠানো হতো। সেই ফাইলগুলো তদারকি করতেন অফিসের সার্টিফিকেট পেশকার, সার্ভেয়ার ও কানুনগো, যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন বলেও জানা গেছে। এর আগে পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা থাকাকালীন নানান অপরাধে তার পদোন্নতি অবনতি করে উল্লাপাড়ায় বদলী করা হয়। চাকুরি জীবনে সার্ভিসবুক খুজলেই আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর বা আইডি দিয়ে সার্চ দিলেই বোঝা যাবে কত মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। এখনই দুদকের তদন্ত দরকার, নইলে আরও ক্ষতি হবে। অবিলম্বে নায়েব হাসান আলীর কার্যক্রম তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এসব বিষয়ে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হাছান আলীকে এবিষয়ে অবগত করা হলে কোন উত্তর দেননি। মুঠোফোনে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।













