
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কে উন্নয়ন কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্বল বাস্তবায়নের অভিযোগ উঠেছে। মাটি ভরাট, রাস্তা, ড্রেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগসহ মৌলিক অবকাঠামোর কাজ অসম্পূর্ণ থাকা অবস্থায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্লট হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উদ্যোক্তাদের।
বিসিকের নিয়ম অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন, পানিনিষ্কাশন ও বর্জ্যব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে তবেই প্লট হস্তান্তরের কথা। কিন্তু শিল্পপার্কে এসব কাজের বড় অংশ এখনো শেষ হয়নি। ফলে বেশ কয়েকটি প্লট নিচু জমিতে পরিণত হয়েছে, অনেক জায়গায় জমেছে বৃষ্টির পানি।
২০১০ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর এর মেয়াদ সাত দফায় বাড়ানো হয়। শুরুতে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা, পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকায়। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ দেখানো হলেও বাস্তবে বহু কাজ এখনো অসম্পূর্ণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের বিভিন্ন স্থানে অসম্পূর্ণ রাস্তা, খোলা ড্রেনের পাইপ ও গর্তে জমে থাকা পানি। অধিকাংশ প্লটে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। এ কারণে উদ্যোক্তারা কারখানা নির্মাণ শুরু করতে পারছেন না।
জিলানি অয়েল মিল, যমুনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, যমুনা পেপার অ্যান্ড বোর্ড ফ্যাক্টরি ও গোল্ডেন প্রিমিয়াম অয়েল মিলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা জানান, অসম্পূর্ণ মাটি ভরাটের কারণে নিজ খরচে বালু ফেলতে হচ্ছে। এতে তাদের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং ব্যাংক বিনিয়োগে অনীহা দেখাচ্ছে।
প্রকল্পের শুরুতে মাটি ভরাটের কাজ পায় নৌবাহিনীর নারায়ণগঞ্জ শিপইয়ার্ড। পরে ১৭ কোটি টাকা নিরাপত্তা জামানত জমা দিয়ে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডকে চুক্তি দেওয়া হয়। উদ্যোক্তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত কাজ শেষ করেনি।
বিসিক শিল্পপার্কের উপমহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুবুল ইসলাম জানান, যেসব প্লটে বালু কম রয়েছে, সেগুলোর কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেই শেষ করতে হবে, কারণ তাদের নিরাপত্তা জামানত এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, শিল্পপার্কটি নৌ, রেল ও সড়কপথে সংযুক্ত হওয়ায় এটি দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্পাঞ্চল হতে পারে। তবে অনিয়মের অভিযোগগুলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত করা জরুরি।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও বিসিক শিল্পপার্কের সভাপতি মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, অসম্পূর্ণ প্লট বরাদ্দের বিষয়ে এখনো কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেননি। বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, শিল্পপার্কটি সম্পূর্ণ কার্যক্রমে চালু হলে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অসমাপ্ত কাজের কারণে সেই সম্ভাবনা বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।











