
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার বিচার দীর্ঘ দিনেও শেষ না হওয়ায় হতাশ তাঁর স্ত্রীসহ স্বজন ও সহকর্মীরা। আসামিরা উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে ছাড়া পেয়েছে অনেক আগেই। মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন সময় চাপও দেওয়া হয়। এ নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠায় থাকেন শিমুলের স্ত্রী মামলার বাদী নুরুন্নাহার খাতুন। এদিকে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সহায়তার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাও পূরণ হয়নি। ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে পরদিন মারা যান। মৃত্যুর খবর শুনে শিমুলের নানিও মারা যান। শাহজাদপুরের তৎকালীন মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা (বহিষ্কৃত)। হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন সমকালের উপজেলা প্রতিনিধি শিমুল।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখে সহকর্মীরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন শিমুলকে। শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবে স্মরণসভায় শিমুলের স্বজনদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে দিনটি চলে গেলে কেউ তেমন খোঁজ-খবর নেন না তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের।
এদিকে শিমুল হত্যাকাণ্ডের পর সাবেক এমপি হাসিবুর রহমান স্বপনসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসন নানা প্রতিশ্রুতি দেন। মাদলা গ্রামে শিমুলের কাঁচা বাড়িটি পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। মাদলা থেকে দিলরুবা বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কটি শিমুলের নামে করা হবে জানানো হলেও তা হয়নি। শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহারকে সরকারিভাবে মাদলা গ্রামে বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ হত্যাকাণ্ডে মিরুকে প্রধান আসামি করে।
পুলিশ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিলেও বিচার কাজ শুরু হয়নি। নানা কূটকৌশলে আসামিপক্ষ বিচার বিলম্বিত করছে। এরই মধ্যে মিরু শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সরকার পতনের পর পদ থেকে অপসারিত হলে তিনি আত্মগোপনে।
শিমুলের বৃদ্ধ মামা হাজি আব্দুল মজিদ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সাড়ে সাত বছরের ‘বেশি সময়েও বিচার কাজ সম্পন্ন হয়নি। খুনিদের অনেকে আজও প্রকাশ্যে রয়েছে। বিচার দেখে যেতে পারব কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। খুনিদের বিচার হলে হয়তো মরেও শান্তি পেতাম।’
শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার জানান,’মিরুসহ ৩৮ আসামি জামিনে। উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে মামলা তুলে নিতে মিরু চাপ দেয়। বিচার পেতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রধান বিচারপতি এবং স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বিমল কুমার কুণ্ডু জানান, প্রকাশ্যে শিমুলকে গুলিতে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দ্রুত পুলিশ চার্জশিট দেয়। আসামিরা কূটকৌশলে মামলার চার্জ গঠন আটকে রেখেছে। ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ ছয় সপ্তাহের মধ্যে শিমুল হত্যা মামলায় হাইকোর্টে স্থগিতাদেশের রুল নিষ্পত্তির আদেশ দিলেও মামলা স্থবির হয়ে আছে।’ বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কাশেম মিয়া
জানান, ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি শাহজাদপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে শিমুল হত্যা মামলা সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক সাতবার চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করলেও আসামিপক্ষ নানা অজুহাতে সময় প্রার্থনা করায় চার্জ গঠন বাধাগ্রস্ত। ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ শিমুল হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এর পর আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে গিয়ে এটি স্থগিত করে রেখেছে। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শিমুলের স্ত্রী লিভ-টু-আপিল করেন। ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। কিন্তু আর এগোচ্ছে না বিচারিক প্রক্রিয়া।
শিমুলের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী নুরুন্নাহার ছেলেমেয়ে নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন। শাহজাদপুর ছেড়ে তারা বগুড়ায় ভাড়া বাসায় আছেন। জেলা সদরে এসেনসিয়াল ড্রান্স কোম্পানিতে উৎপাদনকর্মী নুরুন্নাহার। স্বামীর মৃতুর পর ২০১৭ সাল থেকে তিনি চাকরি করছেন। মেয়ে তামান্না-ই ফাতেমা বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বড় ছেলে আল নোমান নাজ্জাশি সাদিক এইচএসসি পাস করেছে।’
১৬/১০/২০২৪