
নজরুল ইসলাম: সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিসে চাঞ্চল্যকর এক জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি একজন ব্যক্তির নামে অবৈধভাবে নামজারি করে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন কানুনগো শামিম রেজা। অভিযোগ রয়েছে ভূমি অফিসের একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সহায়তায় এই অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে সিরাজগঞ্জ শহরের শিয়ালকোল এলাকায় জনস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ৭৩৬২ নম্বর দলিলের মাধ্যমে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ০.৩১ শতক জমি কিনে নেয়। জমির দখল বুঝে নিয়ে নামজারি সম্পন্ন করে, নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। জমির একাংশে স্থাপনা নির্মাণ করে সেখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম।
তবে দীর্ঘ ৪৫ বছর পর, ২০২৩ সালে মিজানুর রহমানের ছেলে ইকবাল হঠাৎ ওই জমির মালিকানা দাবি করে বসেন। অভিযোগ রয়েছে, কানুনগো শামিম রেজা ও ভূমি অফিসের একটি সিন্ডিকেটের সহায়তায় ইকবাল কৌশলে জমিটি নিজের নামে নামজারি করিয়ে নেন। এমনকি হালনাগাদ ভূমি করও পরিশোধ করেন, যাতে কাগজপত্রে জমির সরকারি মালিকানা আড়াল থাকে।
শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিল আফরোজ বলেন, “সরকারি এই সম্পত্তি আমরা ১৯৭৯ সালেই কিনে নিয়েছি এবং নিয়মিত খাজনা দিচ্ছি। এখন কিছু ভূমিদস্যু এই জমি দখলের চেষ্টা করছে। বিষয়টি সুপরিকল্পিত একটি ষড়যন্ত্র।”
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. হাছান আলী বলেন, “আমার পূর্ববর্তী কর্মকর্তা ইকবালের কাছ থেকে খাজনা নিয়েছেন। পরে যখন জানা যায় এটি সরকারি জমি, তখন নামজারি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”
অভিযোগ সম্পর্কে কানুনগো শামিম রেজা বলেন, “সরকারি জমি নামজারির ঘটনায় আমার দায় রয়েছে। তবে কোনো ধরনের ঘুষ বা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়। কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, মেনে নেব।”
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফান নজমু জানান, “নামজারিতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত, সবাইকে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। জমিটি সরকারি কিনা তা যাচাই করতে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে কমিশনার বরাবর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।”
এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৪৫ বছর আগে সরকারকে বিক্রি করা জমির মালিকানা পুনরায় দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসংগত এবং এটি ভূমি অফিসে চলমান দুর্নীতিরই বড় প্রমাণ। তারা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।