
ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্যের খুনের ঘটনায় গ্রামে নেমেছে শোকের ছায়া, জানাজা শেষে দাফন পারিবারিক কবরস্থানে
জহুরুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর (২৫) মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গ্রামের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। অকাল এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবার-পরিজনসহ এলাকাবাসী। মরদেহের অপেক্ষায় ব্যাকুল হয়ে আছেন স্বজনরা।
নিহত সাম্য বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামের ফরহাদ সরদারের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে। পাশাপাশি হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
ঘটনার বিবরণ:
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে মোটরসাইকেল সংঘর্ষের জেরে অপর একটি মোটরসাইকেলের আরোহীর সঙ্গে সাম্যের কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাম্যকে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে রাত ১২টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পারিবারিক তথ্য ও শোকাবহ পরিবেশ:
সাম্যের চাচা কাউসার আলম জানান, সাম্যের বাবা ফরহাদ সরদার চার সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। সাম্য ছিলেন সবার ছোট। তার মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। ছেলের মৃত্যুর খবরে পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় অবস্থান করছেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকায় জানাজা হবে এবং সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে এনে সড়াতৈল জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দাফন করা হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, “সাম্য খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে উল্লাপাড়ার মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিল সে।”
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকেরিয়া হোসেন জানান, “ঢাকায় জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”
বিক্ষোভ-মিছিল ও বিচার দাবি:
এদিকে, ছাত্রদল নেতা সাম্যর হত্যার প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উদীয়মান মেধাবী ছাত্রের এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড গোটা দেশবাসীকে শোকাহত করেছে। স্বজনদের বুকভাঙা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে সড়াতৈল গ্রামের আকাশ-বাতাস। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার এখন সময়ের দাবি।