নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানত বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশই ঋণ হিসেবে নিয়েছে সরকার। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই অর্থ উৎপাদনশীল খাতে নয়, বরং ঋণের বোঝা বাড়াতেই ব্যয় হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ‘ডেট বুলেটিন’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ১৭১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬২ শতাংশ—অর্থাৎ ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৪ কোটি—ব্যাংক থেকে নেয়া। আড়াই বছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজার ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হওয়ায় সরকার ও বেসরকারি খাত—উভয়ই ব্যাংকনির্ভর। এতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা চাহিদামতো ঋণ পাচ্ছেন না, যা বিনিয়োগ স্থবিরতার অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী জানান, “ব্যাংককে সরকারকে ঋণ দেওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি, বরং বেসরকারি খাতে ঋণ দিয়ে অর্থনীতি সচল রাখার জন্যই তাদের মূল দায়িত্ব।”
ড. মইনুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনার সময়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া হয়, যার বেশিরভাগই ঋণনির্ভর ছিল। বর্তমানে তার সুদের বোঝা টানতে গিয়ে সরকারের পরিচালন ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে।”
২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ২০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশে। শুধু চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেই সরকারের সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “ঋণ যদি জনকল্যাণে ব্যবহার হতো, তাহলে তা যৌক্তিক হতো। কিন্তু সরকারি বিনিয়োগ ও সেবার মানে তার প্রতিফলন নেই। বরং সুদ পরিশোধ করতে গিয়েই আবার নতুন করে ঋণ নিতে হচ্ছে।”
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা, বাজেট ঘাটতি কমানো এবং সরকারি ব্যয় দক্ষভাবে ব্যবস্থাপনার দিকেই মনোযোগী হওয়া জরুরি।
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.