
নিজস্ব প্রতিবেদক: ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত নিম্ন আয়ের রোগীদের জন্য ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। দেশের ৪৩০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ১০টি জেলা হাসপাতালে স্থাপিত এনসিডি কর্নারগুলোতে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন এসব কর্নারে গড়ে ২৫ হাজার রোগী ওষুধ পেতেন। সরকার পরিচালিত কৌশলগত পরিকল্পনা (অপারেশন প্ল্যান বা ওপি) বন্ধ হওয়ায় এই সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জানা গেছে, গত ২৬ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের একটি চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এনসিডি কর্নারে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়ে। রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য রোগীকে ওষুধ না পেয়েই ফিরতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “হঠাৎ ওপি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব তহবিল না থাকায় তারা চাইলেও ওষুধ কিনতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
২০১৮ সালে চালু হওয়া এনসিডি কর্নারের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা অসংক্রামক রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, পরামর্শ ও ওষুধ সরবরাহ দেওয়া হয়। বর্তমানে এসব কর্নারে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। প্রতিমাসেই নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার।
চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ ও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ওষুধের অনিয়মিততা হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজিয়া আফরিন বলেন, “সরবরাহ বন্ধ থাকায় আমরা বড় ধাক্কা খেয়েছি। মানুষ আমাদের কাছে সমাধান চায়, কিন্তু মজুদ শেষ হয়ে এলে আমরা কিছুই করতে পারি না।”
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুবাস সরকার বলেন, “আমাদের কর্নারে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী আসে। এখন অনেক সময় সব ওষুধ দিতে পারছি না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, “আগে কেন্দ্রীয়ভাবে ওষুধ সরবরাহ করা হতো। এখন থেকে উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য প্রশাসন নিজস্ব বাজেট থেকে ওষুধ কিনবে। নতুন অর্থবছর শুরু হলে ওষুধ কেনা সম্ভব হবে।”
সরকারি স্বাস্থ্য বুলেটিন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশই হচ্ছে অসংক্রামক রোগে, যার ৩৪ শতাংশ হৃদরোগজনিত। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এই মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত ওষুধ সরবরাহ পুনরায় চালু না হলে নিম্নবিত্ত রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়বে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন তারা।