
কক্সবাজার প্রতিনিধি: বন্ধের মুখে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাইফ গার্ড কর্মীদের কার্যক্রম। ফলে জীবিকা হারানোর শঙ্কায় যেমন উদ্বিগ্ন ২৭ জন প্রশিক্ষিত কর্মী, তেমনি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় স্থানীয়রা ও আগত দর্শনার্থীরা।
২০১২ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এবং ২০১৪ সাল থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হওয়া ‘সিসেফ লাইফ গার্ড’ কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ৭৯৫ জন ডুবে যাওয়া মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প বন্ধের শঙ্কা
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) ‘সিসেফ’ প্রকল্পের ফিল্ড টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন,
‘২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসকের অনুরোধে দাতা সংস্থা রয়াল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন (আরএনএলআই) আরও ৯ মাস সময় বাড়িয়েছে। বর্তমানে তা আগামী সেপ্টেম্বরেই শেষ হচ্ছে। প্রকল্প চলমান রাখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাথে আলোচনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাড়ানোর সম্ভাবনার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
সরকারি সহায়তার অপেক্ষায় সিসেফ
সিআইপিআরবি’র সিনিয়র অ্যাডভাইজার ড. শাইকুল ইসলাম হেলাল বলেন,
‘দাতা সংস্থা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়াবে না। আমরা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় এবং সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আশাব্যঞ্জক সাড়া মেলেনি।’
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন,
‘আমরা প্রকল্পটি আরও চালু রাখার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। যদিও এখনো সাড়া পাইনি, তবে হয়তো মন্ত্রণালয় বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করছে।’
পর্যটকদের উদ্বেগ
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক আসিফুর রহমান বলেন,
‘লাইফ গার্ডরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য যে সচেতনতা এবং তৎপরতা দেখিয়ে থাকেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। তারা না থাকলে সাগরে নামা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।’
স্থানীয় সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু বলেন,
‘প্রতিবছর বহু পর্যটককে উদ্ধার করেন লাইফ গার্ড সদস্যরা। তাদের নির্দেশনাও সাগরে নামার আগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ কার্যক্রম বন্ধ হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে।’
কর্মীদের কণ্ঠে উদ্বেগ
সিসেফ লাইফ গার্ড টিম লিডার ওসমান গনি বলেন,
‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে অল্প বেতনে আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করছি। সমুদ্র এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। প্রকল্প বন্ধ হলে শুধু আমাদের জীবিকা নয়, বরং পর্যটকদের জীবনও হুমকির মুখে পড়বে।’