
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সচিবালয়ে অফিসকক্ষ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৩০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অফিসকক্ষ বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ডিও (আধা-সরকারি পত্র) পাঠিয়েছেন চারজন উপদেষ্টা ও আটজন সচিবও।
সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালে এই মন্ত্রণালয়টিকে সচিবালয়ের বাইরে ইস্কাটনের বোরাক টাওয়ারে সরিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভবন মালিককে আর্থিক সুবিধা দিতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নেন। ফলে সেই ভবনে এখনো পুলিশি নিরাপত্তা দেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভবনের চারতলা ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে সরকারকে গুনতে হচ্ছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা, যা বছরে দাঁড়ায় তিন কোটি ছয় লাখ টাকায়। এই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত ৪ সেপ্টেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ডিও দিয়ে সচিবালয়ের নবনির্মিত ভবনে ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা চায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, মন্ত্রণালয়টির অধিকাংশ কার্যক্রম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থান অত্যাবশ্যক।
তবে শুধু প্রবাসী কল্যাণ নয়—একইভাবে আরও ৩০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং বিভিন্ন দপ্তর সচিবালয়ে জায়গা চেয়ে পত্র দিয়েছে। জায়গার অভাবে অনেকে সচিবালয়ের বাইরের ভবনে কাজ চালাচ্ছে। প্রশাসনের পরিধি বাড়ায় জনবলও বেড়েছে। ফলে সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
জটিলতা নিরসনে সরকার সচিবালয়ের সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। গুলিস্তানের পুরনো জিপিও ভবনের প্রায় পাঁচ একর জায়গায় নির্মাণ করা হবে আধুনিক বহুতল সচিবালয় ভবন। পূর্ব পাশের সড়কের ওপর দিয়ে সংযোগ সেতু এবং নিচ দিয়ে পাতাল পথের মাধ্যমে নতুন ভবনের সঙ্গে মূল সচিবালয়ের সংযোগ স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পের সারসংক্ষেপে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সম্মতি মিলেছে।
ডাক অধিদপ্তরের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে আধুনিক ভবন থেকে জিপিও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলে পুরনো জিপিওর বিশাল জায়গা বর্তমানে ব্যবহারবিহীন পড়ে রয়েছে।
তবু জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তারা এখনো জমিটি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে দেয়নি। এ নিয়ে গত ৩০ জুন পূর্ত মন্ত্রণালয় একটি ডিও দিয়ে জমি হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। তাতে বলা হয়, অনুমোদিত ২০.৮৩ একর জায়গায় বর্তমানে ৪১টি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চলছে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে নতুন জমি ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
সরকার প্রধানের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতায় পড়ায় সচিবালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সময়মতো জমি হস্তান্তর না হলে সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।