
নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট সাতটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার রাজধানীতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিত আকারে প্রস্তাবগুলো জমা দেয় দলটি। পরে কমিশন সূত্রে বিষয়টি জানা যায়।
জামায়াতের দেওয়া ৭টি প্রস্তাব হলো—
১. ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন
জাতীয় সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ থেকে ৩০ দিন পূর্বে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, সর্বোচ্চ ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়েছে।
২. সংসদের মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য জামায়াত তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে—
প্রস্তাব-১: প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার সমন্বয়ে বাছাই কমিটি
ক. প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা বা নেত্রীর সমন্বয়ে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি গঠিত হবে। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতি সভাপতিত্ব করবেন।
খ. এ কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী অনধিক ৩ (তিন) দিনের মধ্যে কমিটির সদস্যরা সভায় মিলিত হবেন। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কমিটির নিকট সরকারি দল বা জোট ৫ (পাঁচ) জন, প্রধান বিরোধী দল বা জোট ৫ (পাঁচ) জন এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য বিরোধী দলগুলো ২ (দুই) জন করে নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে।
কমিটি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করে রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করবে এবং সংসদের মেয়াদ অবসানের পর থেকে পরবর্তী ১২০ (একশত বিশ) দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দান করবেন।
প্রস্তাব-২: সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে বাছাই কমিটি
ক. সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ থেকে ৩০ দিন পূর্বে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায়; ১. প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ নেতা বা সরকারি দলের সংসদীয় দলনেতা, ২. বিরোধী দলীয় নেতা, ৩. সংসদের স্পিকার, ৪. সংসদের বিরোধী দলীয় ডেপুটি স্পিকার, ৫. সংসদ উপনেতা, ৬. সংসদের প্রধান হুইপ, ৭. সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা, ৮. বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ এবং ৯. সংসদের অন্যান্য বিরোধী দলের ২ (দুই) জন প্রতিনিধি—সর্বমোট ১০ (দশ) জন সদস্যের সমন্বয়ে ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন সংসদের স্পিকার।,
খ. এই কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী অনধিক ৩ (তিন) দিনের মধ্যে কমিটির সদস্যরা সভায় মিলিত হয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবেন এবং তিনি সংসদের মেয়াদ অবসানের পর থেকে পরবর্তী ১২০ (একশত বিশ) দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।
গ. এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে ৩ (তিন) দিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সংসদের সরকারি দল বা জোট পাঁচ (৫) জন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল বা জোট পাঁচ (৫) জন এবং সংসদের অন্যান্য বিরোধী দল ৩ (তিন) জন — সর্বমোট ১৩ (তের) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে।
ঘ. কমিটি প্রস্তাবিত ১৩ (তের) জন ব্যক্তির মধ্য থেকে ১ (এক) জনের নাম চূড়ান্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাইপূর্বক রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করবে এবং সংসদের মেয়াদ অবসানের পর থেকে পরবর্তী ১২০ (একশত বিশ) দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দান করবেন।
ঙ. এই সংবিধান এবং আইনের বিধানাবলী দ্বারা উপযুক্ত ব্যক্তির যোগ্যতা/অযোগ্যতা নির্ধারিত হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার বয়সসীমা, যা এখন ৭২ বছর, এ বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে এবং পুনঃনির্ধারণ করা যেতে পারে।
প্রস্তাব-৩: সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল
উপরে উল্লিখিত প্রস্তাবগুলোতে একমত হওয়া না গেলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করা হবে। তবে রাষ্ট্রপতিকে রাখার অপশনটি বাদ দেওয়া হবে।,
৩. উপদেষ্টাদের নিয়োগ
প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ লাভের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালনার জন্য ১নং প্রস্তাবে বর্ণিত বিধানের আলোকে প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা বা নেত্রীর সমন্বয়ে গঠিত বাছাই কমিটি অথবা ২ নং প্রস্তাবে বর্ণিত বাছাই কমিটি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে ২নং প্রস্তাবের ঙ- এর বিধানমতে যারা উপযুক্ত, তাদের মধ্য থেকে ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাদেরকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
৪. সংসদের মেয়াদ অবসান ব্যতীত ক্ষেত্রে
মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় উপরে বর্ণিত তিনটি প্রস্তাবের মধ্য থেকে যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে, তার আলোকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।
৫. পদমর্যাদা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন এবং উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
৬. দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার
এই সংবিধানে বর্ণিত বিধানাবলী সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য, এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে।
৭. নির্বাচনের সময়সীমা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১২০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করবে। যদি কোনো কারণে তা সম্ভব না হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ আরও ৬০ দিন বর্ধিত হবে।,