
নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের বিপরীতমুখী অবস্থানে পুরো রাজধানীজুড়ে এক থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা এক যুবক (২৫) নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে এক পথচারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের নিচে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই পথচারীরা তার নাম পরিচয় বলতে পারেননি।
অজ্ঞাত ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী আকাশ মামুদ বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে পেট্রোল পাম্পের সামনে পড়ে থাকতে দেখি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক জানান তিনি আর বেঁচে নেই। প্রাথমিকভাবে আমরা ওই যুবকের নাম পরিচয় জানতে পারেনি। তার ঘাড়ে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিন কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। আর শিক্ষার্থীদের বিপরীতে এখন সড়কে অবস্থান করছে ছাত্রলীগও। যার জন্য বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে।
সায়েন্স ল্যাব
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে দিকে এই ঘটনা ঘটে। জানা জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ ও হামদর্দ কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
এসময় বিক্ষোভকারীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে স্লোগান দিতে থাকে। অন্যদিকে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও ঢাকা কলেজের সামনের দিক থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দেয়।
চানখাঁরপুল
রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে চার শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।’
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ্ হল-চানখারপুল রোডে দফায় দফায় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এসময় চানখারপুল-ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) এলাকা দখলে নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। ফলে এই এলাকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে, ঢাকা মেডিকেল ও বার্ণ ইন্সটিটিউটে আসা অ্যাম্বুলেন্সকে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় ক্যাম্পাস থেকে মিছিল বের করে কোর্টভবন এলাকা পার হয়ে রায়সাহেব বাজারের দিকে এগিয়ে যায়। সেসময় গলি থেকে মিছিলে গুলিবর্ষণ হয় বলে জানা গেছে।
শুধু তাই নয়, রাজধানীর সাভার,শাহবাগ, উত্তরা, বসুন্ধরা, ধানমন্ডীসহ বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সেই সাথে ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনেও হামলা চালিয়েছে অজ্ঞাতনামারা।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান এ আন্দোলনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে’।
চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের মধ্যে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুড়তে দেখা গেছে এক যুবককে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়া রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি’) এলাকা। গুলিবিদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫) নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন।’