সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও অটোপাসে শিক্ষার মানে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারির সময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নেয়া অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের সিদ্ধান্ত এখন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর ফেলেছে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্তগুলোর কারণে শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত।

২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে অটোপাসের সূচনা ঘটে। এরপর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের স্থগিত হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় পুনরায় অটোপাস ঘোষণা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান বলেন, উচ্চশিক্ষায় সাফল্যের জন্য মাধ্যমিকে শক্ত ভিত্তি অপরিহার্য। অথচ অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ফলে শিক্ষার্থীদের সে ভিত্তিই দুর্বল হয়েছে। তিনি জানান, ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থী এমন বিষয়ও বুঝতে পারে না, যা তাদের আগেই শেখার কথা ছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানাও জানান, ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এবং হীনম্মন্যতা। পরীক্ষার খাতায় তাদের উত্তর দুর্বল হওয়ায় প্রভাব পড়ছে ফলাফলেও।

শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষকরাও একই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবিষয়ও আগে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস বলেন, ‘২০২০ সালের পর স্নাতক পর্যায়ে একাধিক বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণ করাতে হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, অটোপাসের নজির শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে এ ধরনের দাবি করতে উৎসাহিত করছে, যা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘পরীক্ষা না নিয়ে পাস করালে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জন ব্যাহত হয়, আগ্রহ কমে যায় এবং কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।’ তিনি মনে করেন, করোনার সময় পরীক্ষা বিলম্ব হলেও নেয়া উচিত ছিল।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী অটোপাস বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আওতায় উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর মানসম্মত দক্ষতা অর্জনে ঘাটতি থাকায় রাষ্ট্রও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগেও শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতি রক্ষা করতে বিকল্প পরিকল্পনা থাকতে হবে। না হলে এক প্রজন্মের শিক্ষাগত ক্ষতি সার্বিকভাবে জাতির অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Pinterest
Telegram

এই খবরও একই রকমের

তাড়াশে পূজা কমিটির সাথে উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত

এইচ এম আব্দুল্লাহ আল মাহবুব তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশে পূজা উদযাপন কমিটির সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় ও সৌজন্য

হাসিনার চাচাতো ভাই সেখ জুয়েল এখন বিধান মল্লিক

ঠিকানা টিভি ডট প্রেস: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বহু নেতাকর্মী ভারতে চলে যান। সে মোতাবেক তার চাচাতো ভাই সেখ সালাহউদ্দিন ওরফে সেখ

ভূঞাপুরে জোরপূর্বক জমি দখলের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

জহুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বিএনপি’র দুই নেতার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জোরপূর্বক জমি দখলের বিরুদ্ধে শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করেছে একটি অসহায় প্রতিবন্ধীর পরিবার।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে লুটপাট চলছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট অব্যাহত রয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটিতে। গতকাল শনিবার টানা চতুর্থ দিনের মতো ভাঙা চলেছে সেখানে। এদিনও যে

রণক্ষেত্র খুলনা, শিক্ষার্থী-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা মহানগরী। ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করতে গেলে

শারদীয় উৎসব উপলক্ষে এসআরআই ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ

রাকিবুল ইসলাম নাটোর: শারদীয় উৎসব উপলক্ষে অসহায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করছে এসআরআই ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নাটোরে শহরের শতাধিক অসহায় সনাতন পরিবারের