
নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষকদের সঙ্গে পেনশন স্কিম নিয়ে আজ বৈঠক হয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে। এই বৈঠক অত্যন্ত সফল এবং সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ এবং শিক্ষক প্রতিনিধিদের উভয়ই বলেছেন। শিক্ষক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এই বৈঠকটি আরও আগেও হতে পারত। তাহলে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে এবং শিক্ষকরাও এভাবে আন্দোলনে যেতেন না। এই একটি ঘটনা সুস্পষ্ট করেছে যে, এই ধরনের সংকটের রাজনৈতিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি এবং রাজনৈতিকভাবে যে কোনও সংকটের সমাধান করাটা রাজনৈতিক সরকারের কাছ থেকে কাম্য।
কিন্তু গত ১৫ বছরে আস্তে আস্তে আমলাতন্ত্রের খপ্পরে পড়েছে সরকার। যে কোনও সংকট সমাধানের জন্য আমলাতান্ত্রিক সুরাহার পথে এগোনোর চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তার ফল হচ্ছে হিতে বিপরীত। পেনশন স্কিমের কথাই যদি ধরা যায় তাহলে এই পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন করা যেত আরও সহজে এবং সুন্দর প্রক্রিয়ায়। যখন শিক্ষকদের কাছে এই পেনশন স্কিম দেওয়ার কথা বলা হচ্ছিল, তখনই যদি সংশ্লিষ্টরা শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতেন, তাদেরকে পুরো বিষয়টা বোঝাতেন এবং এটি সরকার কেন চাচ্ছে তার বাস্তব কারণের কথা উল্লেখ করতেন, সে ক্ষেত্রে শিক্ষকরা হয়তো এই ধরনের আন্দোলনে যেতেন না। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া একতরফা ভাবে একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তটি শিক্ষক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, একটি সংকটের সমাধানে রাজনৈতিক উদ্যোগ খোঁজার আগে আমলাতান্ত্রিক সমাধানের দিকে সরকার ঝুঁকছে এবং এর ফলে ছোট সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে। ধরা যাক ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের বিষয়টি। সেই সময়ে যখন শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলন করেছিল তখনই এর রাজনৈতিক সমাধান হতে পারত। সরকার পুরো কোটা বাতিল না করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বসতে পারতেন এবং কোটা নিয়ে একটি কমিশন করে কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে সকল পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা যেত। কিন্তু সরকার সে পথে যায়নি।’
আমলারা সমাধান দিয়েছেন যে এখনই সব কোটা বাতিল করে দিলে সংকটের সমাধান হবে। এ যেন মাথা ব্যথায় মাথা কাটার মতোই সমাধান। সেই সময়ই সমাধান হয়েছিল বটে। কিন্তু এটি যে একটি যুক্তিসঙ্গত সমাধান ছিল না আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ সমস্ত কোটা বাতিল করা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এর ফলে মানুষ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, নারী, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। কোটা বাতিলের পর বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এই সময় নারীর বিসিএস অন্তর্ভুক্তি কমেছে’। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর চাকরি লাভে বঞ্চিত হয়েছে। অন্তত ১৮ থেকে ২০ টি জেলা থেকে কেউই সরকারি চাকরি পায়নি। তাই টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে সব সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে, আমলাতান্ত্রিক সমাধান নয়। যে সমস্যাগুলো রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করা যায় তা দীর্ঘ মেয়াদী সুফল দেয় সরকারকেই। রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে একটি সমাধানে সকল পক্ষের ভূমিকা থাকে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক সমাধান সবসময় চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং এ ধরনের সমাধান দীর্ঘ মেয়াদে সরকারকেই চাপে ফেলে। যা বর্তমানে হয়েছে। আর এ কারণেই সংশ্লিষ্ট সকলে মনে করেন যে সংকট সমাধানে সরকারকে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, আমলাতান্ত্রিক নয়।’