নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। শেরপুরের নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় কমপক্ষে ১১৩টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা। তলিয়েছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে মাছের পুকুর ও ঘের। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল এলাকায় ঢলের পানিতে ডুবে ইদ্রিস আলী (৬৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাত ৯টা থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর রাতভর বৃষ্টিতে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পানি বেড়ে উপজেলার সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভেঙে এবং নদীর পানি বিপদ সীমার উপড়ে উঠে লোকালয়ে পানি আসা শুরু হলে পানি বন্দী হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।
নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতেও পানি বেড়েছে। ডুবে গেছে নালিতাবাড়ী পৌরসভাসহ তিনটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। ভোগাই নদীর দুই পাড়ের কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, কৃষি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে পানি। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে শুক্রবার ভোর থেকে লোকালয়ে পানি আসা শুরু হলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ।'
স্থানীয়রা বলছেন, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার থেকেই মহারশি নদীতে পানি বাড়ছিল। গভীর রাতে নদীর কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়। এর পর পানি ঢুকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। ঝিনাইগাতী বাজারে ও রাংটিয়া সড়কের ওপর দিয়ে এবং ভোগাই নদীর ভাঙন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে গড়কান্দা ও শিমুলতলী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকছে। ভেঙে গেছে বাড়িঘর। জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটছে মানুষ।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ভোগাই নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার শেরপুর সদর উপজেলায় ১৭৭ মিলিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ২২৫ মিলিমিটার এবং নাকুগাঁও পয়েন্টে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৪ হাজার ২শ হেক্টর আমনের জমি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২শ হেক্টর জমির আমন ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া এক হাজার হেক্টর সবজির আবাদ পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে।'
ইপেপার
Copyright © 2025 ThikanaTV.Press. All rights reserved.